atv sangbad

Blog Post

শুধু মশা মেরে নয়, প্রয়োজন ডেঙ্গু ভ্যাকসিন

নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ

দেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এতে চাপ পড়ছে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর। এ পরিস্থিতিতে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সামনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশের ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু মশা নিধন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না।

প্রয়োজন ডেঙ্গু ভ্যাকসিন কার্যক্রম। এতে হাসপাতালে ভর্তি ৯০ শতাংশ কমবে। কমে আসবে মৃত্যুঝুঁকি।
সোসাইটি ফর মেডিক্যাল ভাইরোলজিস্টস বাংলাদেশের প্রকাশনা সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশা নিধন চূড়ান্ত কোনো সমাধান হতে পারে না।
এর উদাহরণ হতে পারে সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরে ১৯ বছরের প্রচেষ্টায় মশা নিয়ন্ত্রণ হয়েছে, কিন্তু সেখানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমানো যায়নি। দেখা গেছে, মশা নিধন করে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রথমে কমে এলেও পরে তা আবার বেড়ে যায়। কারণ দেশের বাইরে থেকে আসা মানুষ থেকে যখন ডেঙ্গু ছড়ায়, সেটি ব্যাপক আকার ধারণ করে।
এ জন্য শুধু মশা নিধন নয়, প্রয়োজন ভ্যাকসিন কার্যক্রম।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনাসভায় ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী এসব কথা বলেন। সোসাইটি ফর মেডিক্যাল ভাইরোলজিস্টস বাংলাদেশ এই আলোচনাসভার আয়োজন করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হতে পারে
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, বর্তমানে শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে হলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তা না হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন হয়ে পড়বে।ডেঙ্গু জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা বর্ণনা করে অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, ‘এ জন্য সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।
কারণ একটা বিষয় খুব পরিষ্কার। আমরা বলি ডেঙ্গু একটা মেডিক্যাল সমস্যা। কিন্তু এটা যতটা না মেডিক্যাল সমস্যা, তার চেয়ে বেশি এনভায়রনমেন্টাল প্রব্লেম। এখানে পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং খুব জরুরি। জনগণকে সম্পৃক্ত করে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম যদি আমরা জোরদার করতে না পারি, রোগীর সংখ্যা যদি এভাবে বাড়ে, তাহলে আমাদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যাবে।’সোসাইটি ফর মেডিক্যাল ভাইরোলজিস্টস বাংলাদেশের আলোচনাসভায় বলা হয়, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা ও মশক নিধনের পাশাপাশি এই রোগের বিস্তার রোধে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও মার্কিন সিডিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত দুটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আছে, যা এরই মধ্যে ২০টির মতো দেশে লাইসেন্স পেয়েছে। এর মধ্যে একটি ডেঙ্গুর চার ধরনেই কার্যকর। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ৮০ শতাংশের কাছাকাছি কার্যকর এবং এর প্রয়োগে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না।
বৈশ্বিক ডেঙ্গু পরিস্থিতি
সোসাইটি ফর মেডিক্যাল ভাইরোলজিস্টস বাংলাদেশের আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী। তিনি জানান, ৩৯০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে। ১৯৭০ সালে মাত্র ৯টি দেশে ডেঙ্গু ছিল। ২০২৩ সালে এটি ১২৫ দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ দেশ এশিয়ায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে বছরে ৩৯ কোটি মানুষ। এর মধ্যে পাঁচ লাখ মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২০ থেকে ২৫ হাজার মৃতুবরণ করে, যার বেশির ভাগ শিশু। ডেঙ্গু চিকিৎসায় খরচ ৩৮ ডলার থেকে দেশেভেদে দুই হাজার ডলার পর্যন্ত। ডেইলি স্কোর (অসুস্থতা, অক্ষমতা বা অকালমৃত্যুর কারণে হারিয়ে যাওয়া বছর) ২০১৭ সালে ছিল প্রায় ১১ লাখ বছর। সেখান থেকে গত কয়েক বছরে এটি ২৯ লাখ বছরে পৌঁছেছে।অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার কারণ হলো বিদেশভ্রমণ। যেসব দেশে ডেঙ্গু রয়েছে, এমন দেশ ভ্রমণের কারণে মূলত ডেঙ্গু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বৈশ্বিক উষ্ণতা এর জন্য দায়ী।
প্রতি চারজনে তিনজনের  লক্ষণ প্রকাশ পায় না

আলোচনাসভায় বলা হয়, এডিস মশা চারজনকে কামড়ালে তিনজনের মধ্যে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অর্থাৎ ১০০ জনের লক্ষণ প্রকাশ পেলে আক্রান্ত হবে ৪০০ জন। কারণ ৭৫ শতাংশ রোগীর কোনো উপসর্গ থাকে না। যাদের উপসর্গ দেখা দেয়, তাদের ৫ শতাংশের সিভিয়ার ডেঙ্গু হয়। যেমন—রক্তপাত, পেটে পানি জমা, এসব থেকে রোগী শকে চলে যায়।

ডেঙ্গু সাধারণত একটি স্বসীমিত। নিজে নিজে ভালো হয়ে যায় এবং মৃত্যুহার ৫ শতাংশের কম। যখন খুব দ্রুত শনাক্ত হবে, তখন যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া যায়। যখন চিকিৎসা করা যায় না, তখন মৃত্যুহার ২০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

ডেঙ্গুর পরীক্ষা এক থেকে  পাঁচ দিনের মধ্যে

ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের একিউট পর্যায়ে ভাইরাসের প্রোটিন-এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন শনাক্ত করা যায়।  লক্ষণ আসার এক থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে তা করতে হবে। সপ্তম দিনে এসে এনএসওয়ান পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। করতে হবে আইজিএম। এনএসওয়ান পরীক্ষা ফলস নেগেটিভ হতে পারে। সেরুটাইপ ২ ও ৪-এর বেলায় এটি বেশি হয়।  এ ছাড়া সেকেন্ডারি ডেঙ্গুতে এনএসওয়ান পরীক্ষা কম সেনসিটিভি।

মশার ইতিবৃত্ত

শুধু স্ত্রী মশা কামড়ায়। ডিম উৎপাদনে তাদের রক্তের প্রোটিন দরকার। পুরুষ মশা কামড়ায় না। তারা ফুল থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে। স্ত্রী মশা বাঁচে ৪২ থেকে ৫৬ দিন। এরা নিজ ওজনের ৩ গুণ বেশি রক্তপান করতে পারে।

আলোচনাসভায় বলা হয়, যদি পৃথিবীর প্রতিটি মশাকে মেরে ফেলা হয়, তাহলে পরাগায়ণ কমে যাবে। শত শত প্রজাতির মাছকে তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। পাখি, বাদুড়, মাকড়সা, পোকামাকড়, সালামান্ডার, টিকটিকি এবং ব্যাঙও মশা খায়। তাদের বেঁচে থাকার লড়াই কঠিন হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব  মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএসএমএমইউয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচার সহজ উপায় হলো মশাগুলো মেরে ফেলতে হবে। আমরা তা পারছি না। আরেকটি সহজ বুদ্ধি হলো সব রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া। সেটাও আমরা পারছি না। এ ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কথা ভাবা যেতে পারে।’

সোসাইটি ফর মেডিক্যাল ভাইরোলজিস্টস বাংলাদেশের সহসভাপতি এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ডেঙ্গু ভ্যাকসিন নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। ভবিষ্যতে আলোচনা হলে তা ভাবা যাবে। এ ছাড়া এই বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন ও নাইট্যাগের পরামর্শ প্রয়োজন। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব।

এটিভি/এস

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :