নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ
দেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এতে চাপ পড়ছে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর। এ পরিস্থিতিতে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সামনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশের ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু মশা নিধন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না।
আলোচনাসভায় বলা হয়, এডিস মশা চারজনকে কামড়ালে তিনজনের মধ্যে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অর্থাৎ ১০০ জনের লক্ষণ প্রকাশ পেলে আক্রান্ত হবে ৪০০ জন। কারণ ৭৫ শতাংশ রোগীর কোনো উপসর্গ থাকে না। যাদের উপসর্গ দেখা দেয়, তাদের ৫ শতাংশের সিভিয়ার ডেঙ্গু হয়। যেমন—রক্তপাত, পেটে পানি জমা, এসব থেকে রোগী শকে চলে যায়।
ডেঙ্গু সাধারণত একটি স্বসীমিত। নিজে নিজে ভালো হয়ে যায় এবং মৃত্যুহার ৫ শতাংশের কম। যখন খুব দ্রুত শনাক্ত হবে, তখন যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া যায়। যখন চিকিৎসা করা যায় না, তখন মৃত্যুহার ২০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
ডেঙ্গুর পরীক্ষা এক থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে
ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের একিউট পর্যায়ে ভাইরাসের প্রোটিন-এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন শনাক্ত করা যায়। লক্ষণ আসার এক থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে তা করতে হবে। সপ্তম দিনে এসে এনএসওয়ান পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। করতে হবে আইজিএম। এনএসওয়ান পরীক্ষা ফলস নেগেটিভ হতে পারে। সেরুটাইপ ২ ও ৪-এর বেলায় এটি বেশি হয়। এ ছাড়া সেকেন্ডারি ডেঙ্গুতে এনএসওয়ান পরীক্ষা কম সেনসিটিভি।
মশার ইতিবৃত্ত
শুধু স্ত্রী মশা কামড়ায়। ডিম উৎপাদনে তাদের রক্তের প্রোটিন দরকার। পুরুষ মশা কামড়ায় না। তারা ফুল থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে। স্ত্রী মশা বাঁচে ৪২ থেকে ৫৬ দিন। এরা নিজ ওজনের ৩ গুণ বেশি রক্তপান করতে পারে।
আলোচনাসভায় বলা হয়, যদি পৃথিবীর প্রতিটি মশাকে মেরে ফেলা হয়, তাহলে পরাগায়ণ কমে যাবে। শত শত প্রজাতির মাছকে তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। পাখি, বাদুড়, মাকড়সা, পোকামাকড়, সালামান্ডার, টিকটিকি এবং ব্যাঙও মশা খায়। তাদের বেঁচে থাকার লড়াই কঠিন হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএসএমএমইউয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচার সহজ উপায় হলো মশাগুলো মেরে ফেলতে হবে। আমরা তা পারছি না। আরেকটি সহজ বুদ্ধি হলো সব রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া। সেটাও আমরা পারছি না। এ ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কথা ভাবা যেতে পারে।’
সোসাইটি ফর মেডিক্যাল ভাইরোলজিস্টস বাংলাদেশের সহসভাপতি এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ডেঙ্গু ভ্যাকসিন নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। ভবিষ্যতে আলোচনা হলে তা ভাবা যাবে। এ ছাড়া এই বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন ও নাইট্যাগের পরামর্শ প্রয়োজন। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব।