atv sangbad

Blog Post

সংঘাতের রাজনীতিতে ‘আপ্যায়নের শিষ্টাচার’

সৈকত মনি, এটিভি সংবাদ

বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও সবার নজর কেড়েছে ভিন্ন একটি খবর। দ্বন্দ্ব ও মতভিন্নতা ছাড়িয়ে যেখানে কেবল রাজনৈতিক শিষ্টাচারই ফুটে উঠেছে। শনিবার অসুস্থ বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানের খোঁজ নিতে প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়াও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। বেলা ১২টার দিকে তাকে সেখানে নিয়ে আসা হয়। পরে বেলা ৩টার দিকে ডিবি কার্যালয় থেকে বের হন তিনি।

গয়েশ্বরকে আপ্যায়নের জন্য সোনারগাঁও হোটেল থেকে উন্নতমানের খাবার আনা হয়। ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে তিনি দুপুরের খাবার খান। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গয়েশ্বরের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছেন ডিবি কর্মকর্তা হারুন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন করছে বিএনপি। শনিবার (২৯ জুলাই) ঢাকার সব প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিল তারা। পুলিশ এই কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়নি।

আমানকে দেখতে হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি

আমানের নেতৃত্বে বিএনপির একদল নেতাকর্মী গাবতলীতে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশ আমানকে আটক করত চাইলে নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। ধস্তাধস্তির সময় আমান সড়কে শুয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীদের হটিয়ে দিয়ে পুলিশ সদস্যরা আমানকে ধরে তাদের গাড়িতে ‍তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
 
দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস রানা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানকে দেখতে প্রধানমন্ত্রী তার সহকারী একান্ত সচিব গাজী হাফিজুর রহমান লিকুকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। দুপুরের পর গাজী হাফিজুর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যান আমানকে দেখতে।
 
বিএনপি নেতাকে দেখে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা। তিনি আমান ভাইয়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য যা যা করার প্রয়োজন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমানউল্লাহ আমান পছন্দের যে কোনো জায়গায় যেতে পারেন।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতির বাইরেও আমাদের মধ্যে একটা মানবিক সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার জন্য ফল ও খাবার পাঠিয়েছেন। আমানউল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর এ সব উপহার গ্রহণ করেন এবং মানবতা ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।’
 
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব নূরে এলাহি মিনা জানান, প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো দুপুরের খাবার, বিভিন্ন প্রকার মৌসুমি ফল ও জুস আমানের হাতে তুলে দেন এপিএস-২ গাজী হাফিজুর রহমান।
 
আপ্যায়নে নেই রাজনীতি
প্রধানমন্ত্রীর এই আপ্যায়নের মধ্যে কোনো রাজনীতি দেখছেন না বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘এটি শিষ্টাচার। দিন শেষে তারাও তো মানুষ। রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকতেই পারে।’
 
বাঙালির স্বাভাবের মধ্যেই আতিথেয়তা লুকিয়ে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাড়িতে কেউ এলে, যা আছে, সেটি দিয়েই তাকে আমরা খেয়ে যেতে বলি, এটি শিষ্টাচার। এটি কেবল আমাদেরই আছে, অন্য কোনো জাতির নেই।’
 
“এক-এগারোর সময় বিএনপির অনেক নেতার স্ত্রী-সন্তানকে আটকেরও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি তখন বলেন, বাবা দোষ করতে পারেন, তাদের মেয়ে-স্ত্রীকে আটক করা কেন!’
 
শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার বিবরণ দিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ‘এই শিষ্টাচার তার পক্ষে দেখানো সম্ভব। যা অন্য কেউ করতে পারবেন না। রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকলেও যে কেউ তার মধ্যে এই মানবতা দেখতে পারেন। কারণ দিন শেষে তার মধ্যে বাঙালির স্বভাবজাত মায়া কাজ করে। যেটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও ছিল।’

রাজনীতিবিদদের পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা প্রয়োজন

এ ঘটনাকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখছেন সাংবাদিক এম. এ. আজিজ তিনি বলেন, ‘সরকার আপ্যায়নমুখী হচ্ছে না, বরং এটি হচ্ছে রাজনৈতিক কৌশল। আমরা চাই, রাজনীতিবিদরা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুক। একে অপরের মতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুক। এটি থাকা উচিত।’

“রাজনীতিবিদদের মধ্যে এখন যে অনাস্থা, অবিশ্বাস—সারা জাতি তাতে বিপদের সম্মুখীন। আমরা চাই, বড় দলগুলোর মধ্যে যে অনাস্থা, তা দূর করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে একটা নিরপেক্ষা নির্বাচন করুক। এটিই আমাদের প্রত্যাশা। কোনো হানাহানি রক্তপাত আমরা দেখতে চাই না। দেশ স্বাধীনের ৫১ বছর হয়ে যাওয়ার পরেও রাজনীতিবিদেরা নিজেরা নির্বাচন করতে পারেন না, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারেন না, এটা কেমন কথা”, বলেন সিনিয়র এই সাংবাদিক।
 
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, রাজনীতিবিদদের পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা। তবে এই একটি ঘটনা দিয়ে সবকিছু মূল্যায়ন করা যাবে না। নির্বাচন কীভাবে নিরপেক্ষ করা যায়, সেটির সমাধান বের করতে হবে। ফলমূল নিয়ে আমানুল্লাহ আমানকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দেখতে গেছেন, এর চেয়ে বিএনপির নেতাদের ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করুক। সেটা হচ্ছে বড় কথা।’
 
“তাদের একটি আস্থায় নিয়ে এসে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিক, সেটি জাতি দেখতে চায়। ফলমূল পাঠানো কিংবা সোনারগাঁও হোটেলের খাওয়া-দাওয়া জাতি খুব একটা প্রত্যাশা করে না।”
 
তিনি আরও বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এমন সংস্কৃতি থাকা উচিত। তবে এটিকে আলাদাভাবে বড় করে দেখছি না। কিন্তু এরচেয়ে বড় সমস্যা তো পড়ে আছে। সেটা হচ্ছে, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে তাদের প্রতি যে অনাস্থা, সেটা দূর করা হোক। সেই তুলনায় এই আপ্যায়ন বড় কিছু না।’
 
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এসব বাকোয়াজগিরি না করলে তাদের রাজনীতি থাকে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির পক্ষে কোনো যুক্তি নেই। ২০১৮ সালে এই সরকারের অধীন নির্বাচনে এসেছিল বিএনপি। কিন্তু তারা তখন নির্বাচন ঠিকমতো করতে পারেনি। ব্যর্থ হওয়ার পর তারা এসব বলবেই। বিএনপির এখন রাজনীতি বলতে আর কিছু নেই।’
এটিভি/এস

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :