আহসান হাবীব, এটিভি সংবাদ
দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো কিছুক্ষণ আগে। এ দিন শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় কাটানো সেই স্কুলে যায় ফলাফল জানতে, কেউবা বন্ধুদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। ঢোল ও ড্রামসহ বিভিন্ন বাজনা নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে সবাই। শেষ বেলার এই স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে বন্ধুরা মিলে করে অনেক পরিকল্পনাও।
তবে এবার আর স্কুলে গিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে যোগ দেয়া হচ্ছে না ঢাকার পরীক্ষার্থী মৌসুমির (ছদ্মনাম)। কারণ, বিএনপি ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমাবেশ ঘিরে অনেকের মতো তার মনেও রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সমাবেশের নিয়ে কয়েক দিন ধরে রাজনৈতিক মাঠে উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। এই সমাবেশে নিয়ে কয়েকদিন ধরে নাটকও কম হয়নি। অবশেষে শুক্রবার (২৮ জুলাই) নিজেদের চাওয়া স্থানেই সমাবেশ করবে দুই দল। দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ আর নয়াপল্টনে বিএনপি। দুটি সমাবেশস্থল মাত্র দুই কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে হবে। এজন্য সারা দেশের মানুষের চোখ এখন ওই দুই কিলোমিটারে কী হতে যাচ্ছে সেদিকে।
শান্তিনগরের বাসিন্দা আরশাদুল ইসলাম। তার ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। কিন্তু ফলাফল দেখতে স্কুলে যাবেন না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। বলেন, সবারই ইচ্ছা থাকে এমন দিনে একসাথে আনন্দ করার। কিন্তু এবার পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এতে একটু মন খারাপ থাকলেও সবাইকে মেনে নিতে হবে। ঘরে বসেই নিজেদের মতো ফলাফল দেখে আনন্দ করবেন বলেই জানালেন এই বেসরকারি চাকরিজীবী।
আরশাদুলের মতো নয়াপল্টনের ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসানও উদ্বিগ্ন সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে।
তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন থেকেই টেনশনে আছি। শুক্রবার সমাবেশের জন্য দোকান বন্ধ রাখব ঠিকই কিন্তু তাও যদি সংঘাত হয়! কাছাকাছি জায়গায় সমাবেশ দেয়াতে এই ভয়টা বেশি কাজ করছে। কী যে হবে বুঝতেসি না। দৈনিক বাংলা এলাকার বাসিন্দা উম্মে কুলসুম অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আজ যে সংঘাত হবে না- সে শঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন থেকে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত। কয়েকদিন আগেও ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ঝামেলা হয়েছে। তাই এদিনও ঝামেলা হতে পারে। তার ওপর দুইটা সমাবেশস্থল বাসার কাছে হওয়ায় বেশি ভয়ে আছি।’
এদিকে সকালে ঢাকার রাজপথ তুলনামূলক ফাঁকা। রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা নেই বললেই চলে। মানুষের উপস্থিতিও কম। আর যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ, চলছে ব্যাপক তল্লাশি।
গতকাল রাত থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার এলাকায় পুলিশের নিয়মিত অস্থায়ী চেকপোস্টে তল্লাশি কার্যক্রম চলছে। এ সময় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তিকে।
এ সময় বিভিন্ন পরিবহনে তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করা হয়েছে। তবে তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি তিনি।
আর বিএনপির কর্তারা বলছেন, এবারের মহাসমাবেশ থেকে নির্দলীয় সরকারের দাবি মানার জন্য বর্তমান সরকারকে একটা সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতে পারে। তাদেরও টার্গেট বিশাল জনসমাগম করে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করা।
আর নেতাকর্মীদের সব বাঁধা অতিক্রম করে সমাবেশে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাতে এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি করবেন না, যাতে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হয়।
রাতে বিএনপির সমাবেশের মঞ্চ নির্মাণ পরিদর্শনে এসে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, ঢাকার প্রতিটি এলাকাতে ডাইনি শিকারের মতো আচার-আচরণ করছে পুলিশ। সমাবেশ ঘিরে অসংখ্য নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এখানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েও তারা অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে। পুলিশ সার্বিক সহায়তা না করে সরকারের হয়ে কাজ করছে।
একই সুরে কথা বললেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। বলেন, যারা উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাধা হবে, তাদেরই প্রতিরোধ করা হবে। আন্দোলনের নামে রাজনীতির মাঠ অরাজকতা করার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না।
নজরদারিতে দুই কিলোমিটার
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, দুই দলের সমাবেশকে ঘিরে অন্তত ৩০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। র্যাব, আনসার, এপিবিএনের থাকবে অন্তত পাঁচ হাজার সদস্য। যাদের প্রায় সবার নজর থাকবে বিএনপির সমাবেশের দিকে। সেখানে কোন ধরণের সংঘাতের খবর পেলেই অ্যাকশনে যাবে পুলিশ।
এছাড়া, বিজিবি থাকবে স্ট্যান্ডবাই। বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা মাঠে নামবে। গোয়েন্দা সংস্থা, আনসার, বিজিবি, র্যাব ও ঢাকা হাইওয়ে রেঞ্জের কর্মকর্তারা কন্ট্রোল রুমে বসে দুই সমাবেশে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখবেন।
যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী