ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ
বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। একবার বাড়লে আর কমে না। কয়েক দিন আগে সরকার ১২ কেজির সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কমিয়ে ৯৯৯ টাকা করার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। কি করা? রান্না করে খেতে তো হবে। কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া গ্রামের গৃহবধূ ময়না রানী। বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকি করার দাবিও জানান তিনি।
শুধু ফুলছড়ি নয়, জেলার অধিকাংশ উপজেলায় একই অবস্থা। সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার গৃহিণী শিরিন আক্তার বলেন, রান্না করতে গিয়ে গ্যাস শেষ। পাশের দোকানে গিয়ে ১২ কেজির একটি গ্যাস সিলিন্ডার চান। তবে সরকার নির্ধারিত দাম দিতে গিয়ে তৈরি হয় ঝামেলা। দোকানি দাম রাখলেন ১ হাজার ১২০ টাকা। এ বিষয়ে দোকানি আশরাফুল বলেন, ৯৯৯ টাকা দাম নির্ধারণ ঠিক আছে। কিন্তু এই সিলিন্ডারগুলো আগে কেনা। তাই আগের দামেই বিক্রি করছেন। নতুন সিলিন্ডার আসলে সরকার নির্ধারিত দাম রাখা হবে।
ফুলছড়িসহ এলাকার বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে একই চিত্র পাওয়া গেছে। সরকারি ঘোষণার প্রায় ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও দাম কমেনি। ৭০ থেকে ১২০ টাকা কিংবা তারও বেশি দামে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। বিষয়টি স্বীকার করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ডিলারের বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম মাত্র ২০ টাকা কমিয়ে খুচরা দোকানে ১ হাজার ১০০ টাকায় দেওয়া হচ্ছে। সরকার দাম কমিয়েছে শুনেছেন। কিন্তু তারা চাকরি করতে এসেছেন– মালিক যা বলেন, সেটাই করেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ফুলছড়ি উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজারে গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার কিনতে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা গচ্ছা দিচ্ছেন ভোক্তারা। সরকার দাম কমালেও সুফল পাচ্ছেন না তারা। মাঝেমধ্যেই ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার ঘটনা ঘটছে।
দুটি কোম্পানির এলপিজি সিলিন্ডারের ডিলার জীবন সাহা বলেন, ‘সরকার দাম নির্ধারণ করলেও সে দামে যদি কিনতে না পারি, তাহলে বিক্রি করব কীভাবে? কোম্পানি থেকে ১ হাজার ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।’ আরেক ডিলার বিমল সাহা বলেন, বগুড়া ডিপো থেকে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ বন্ধ। বাধ্য হয়ে খুলনার মোংলা থেকে আনা হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত সময় ও টাকা ব্যয় হয়। ফলে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি নিতে হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন বলে দাবি তাঁর।
গাইবান্ধার একটি ডিলার কোম্পানির ম্যানেজার দাবি করেন, এখান থেকে সঠিক দামে সব উপজেলায় গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়। খুচরা বিক্রেতারা একটু বেশি দামে বিক্রি করবেন, এটাই স্বাভাবিক।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ৯৯৯ টাকা নির্ধারণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বাজারে বেশি দামে বিক্রির কোনো অভিযোগ এখনও পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুলছড়ির কালিরবাজার, ফুলছড়ি, কঞ্চিপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে মুদি ও তেলের দোকান, আবাসিক ভবন, চায়ের দোকান, এমনকি ওষুধ ফার্মেসিতেও বিক্রি হচ্ছে গ্যাসের সিলিন্ডার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জনবহুল এলাকায় সিলিন্ডার গুদামজাত করা হয়েছে। অধিকাংশ দোকানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও নেই।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, খুচরা দোকানে বিক্রির জন্য সর্বোচ্চ ১০টি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা যায়। সে ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স নিতে হবে। এর বেশি বিক্রি করতে হলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। কিন্তু গাইবান্ধা শহরসহ ছয়টি উপজেলায় শত শত প্রতিষ্ঠান সিলিন্ডার বিক্রি করছে বলে জানা গেছে। লাইসেন্স আছে মাত্র তিনটির।
গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা মো. নাসিম রেজা নীলু বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও মজুত করতে লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। ফলে ঝুঁকি বাড়ছে। শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, ক্রেতাদের কাছ থেকে দাম বেশি নেওয়ার কোনো তথ্য পাইনি। তার পরও নিয়মিত বাজার তদারকি করা হবে।
এটিভি/এস