নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ
ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল, আওয়ামী লীগ শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছে। আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়া দলটির আত্মগোপনে থাকা এক নেতার বরাত দিয়ে ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) এক প্রতিবেদনেন এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী (নাদেল) জানান, তারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন শুরু করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকারের পতনের পর অনেক আওয়ামী লীগ নেতা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছিলেন, কিন্তু ৫ আগস্ট তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়ে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে ভারতে চলে যান।
সরকার পতনের পর, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে বিক্ষোভকারীদের ওপর হিংসাত্মক দমন-পীড়নের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের হাজার হাজার কর্মী ও সমর্থক হামলার ভয়ে ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ চলে গেছেন।
সম্প্রতি, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া, শেখ হাসিনা এবং ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
নাদেল বলেন, তারা দলের নেতাদের একত্রিত করার চেষ্টা করছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জন্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আন্দোলন শুরুর সময় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ কিংবা এক মাসের মধ্যে আমরা মাঠে নামতে পারি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতে-এই সরকার কিছুটা ধীর গতিতে চলছে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং শিক্ষাবিদদের নিয়ে ১০টি কমিশন গঠন করা হয়েছে, যা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব করবে।
সেপ্টেম্বরে গঠিত ছয়টি কমিশনকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের প্রস্তাব জমা দিতে হবে। তবে রাজনৈতিক মতৈক্য এবং বাস্তবায়নের জন্য কয়েক মাস সময় লাগতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন বিলম্বিত হলে রাজনৈতিক শূন্যতা দীর্ঘায়িত হবে এবং আওয়ামী লীগ হারানো রাজনৈতিক স্থান ফিরে পাওয়ার সুযোগ পাবে।
আন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক শক্তি নই এবং আমাদের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নেই।
বিশ্লেষকরা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে বড় বাধা হলো প্রশাসনিক ব্যবস্থার অভাব। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান উল্লেখ করেন, সরকার আইন প্রয়োগকারী ও আমলাতন্ত্রের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কাজ করছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগও অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী নয় বলে জানান নাদেল। তিনি বলেন, এই সরকার সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। আমরা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু করলে, এই সরকার টিকবে না।