অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
সীমাহীন দুর্নীতির মহানায়ক মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ২ নম্বর দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সফিউল আলম জুয়েল। চেয়ারম্যান জুয়েলের বিরুদ্ধে ১১ ইউপি সদস্য অনাস্থা জানিয়েছেন। গত বুধবার ইউপি সদস্যরা ইউএনও কার্যালয়ে এ বিষয়ে আবেদন জমা দেন। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউএনওর উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আবু রাহাত।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালে ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে দিঘুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা সফিউল আলম জুয়েল। তিনি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ঘনিষ্ঠজন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জুয়েল ইউপিতে একক প্রভাব বিস্তার করেন। অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন তিনি।
ইউপি সদস্যদের অভিযোগ, তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চেয়ারম্যান জুয়েল সব ধরনের প্রকল্পেই আংশিক কাজ করে টাকা আত্মসাৎ করেন। উপজেলা পরিষদ থেকে কোন অর্থবছরে কত টাকা বরাদ্দ এসেছে, এসব তথ্যও জানাতেন না। জোর করে রেজুলেশনে সই নিয়ে নিজেই প্রকল্প গ্রহণ করে কাজ করতেন। ইউপি সদস্যদের কেউ প্রতিবাদ করলে বা সই না দিলে বিএনপি-জামায়াতের কর্মী বলে মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন।
অনাস্থা আবেদনে বলা হয়, প্রায় তিন বছরে উপজেলা পরিষদ থেকে দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে যত প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, বেশির ভাগ প্রকল্পের সভাপতি হন চেয়ারম্যান শফিউল আলম জুয়েল। কিছু প্রকল্পে ইউপি সদস্যদের নামমাত্র সভাপতি দেখানো হতো। পরে ভয় দেখিয়ে ওই সদস্যের কাছ থেকে চেকে সই রেখে নিজেই প্রকল্পের টাকা তুলে নিতেন। একই স্থানে বারবার প্রকল্প দেখিয়েও তিনি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি সদস্যদের বসার জন্য চেয়ার কেনার প্রকল্প দেখিয়েও টাকা নিজ পকেটে পুরেন। অথচ কোনো চেয়ার কেনা হয়নি।
ইউপি সদস্যদের অভিযোগ, তাদের কোনো কাজই দেননি চেয়ারম্যান। পছন্দের লোক দিয়ে কাজ করিয়েছেন। একাই সব লুটপাট করেছেন। ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সালাউদ্দিন বলেন, দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে একটি শহীদ মিনার ছিল। চেয়ারম্যান জুয়েল প্রশাসনকে না জানিয়ে সেটি ভেঙে দেন। নতুন করে সেখানে আরেকটি শহীদ মিনার নির্মাণের প্রকল্প নেন। সেই টাকা তুলে নেন জুয়েল। কিন্তু শহীদ মিনার হয়নি।
২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. মামুন হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে প্রায় তিন বছরে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বেশির ভাগ প্রকল্পের সভাপতি হয়ে নামমাত্র কাজ করেছেন। পরে সিংহভাগ টাকাই আত্মসাৎ করেন।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. হারুনার রশিদ বলেন, ওয়ারিশের সার্টিফিকেট বাবদ ২০০ টাকা, প্রত্যয়নপত্রের জন্য ১০০ টাকা ও মৃত্যুসনদের নামে পরিষদে টাকা নেওয়া হতো। ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি। সব চেয়ারম্যানের পকেটে গেছে।
১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য রত্না বেগম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চারপাশে অনেক গাছ বিক্রি করে ওই চেয়ারম্যান টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়ে কোনো রেজুলেশনও করেননি।
চেয়ারম্যান মো. শফিউল আলম জুয়েল বলেন, আমি শুনেছি ১১ জন ইউপি সদস্য আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন। তারা যেসব অভিযোগ করেছেন, সবই মিথ্যা। একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে এ কাজ করেছে।