অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
অনিয়মটাই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অস্বাভাবিকহারে দুর্নীতি চলছে জেলা টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানে।
বিশেষ করে দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা। দলিল লেখক, স্ট্যাম্প ভেন্ডার ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত এ সিন্ডিকেটের যোগসাজশে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কামরুজ্জামান কবির ভয়ানকভাবে জড়িয়ে পড়েছেন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে।
অভিযোগ রয়েছে সাব-রেজিস্ট্রার কামরুজ্জামান কবির সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে সাব-কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়তনামা, ঘোষণাপত্র, আমমোক্তারনামা দলিল রেজিস্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
তিনি অফিসে যোগদানের পর থেকে দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি দলিল থেকে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা সেরেস্তার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ টাকা সিন্ডিকেটের সমন্বয়ে ভাগভাটোয়ারা করা হয়। জানা যায়, এ অফিসে সপ্তাহে তিনদিন (রবি, সোম, মঙ্গল) দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। বাকি দু’দিন (বুধ, বৃহস্পতি) অতিরিক্ত দায়িত্বে কাজ করেন ঘাটাইল উপজেলায়।
সাব-রেজিস্ট্রার কামরুজ্জামান কবিরের যোগদানের পর থেকে অদ্যাবধি রেজিস্ট্রি করা দলিল পরীক্ষা করলে দেখা যাবে তার দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, দলিলের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও সেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করেন না। তার চাহিদামতো টাকা না পেলে বিভিন্ন কাগজপত্রের অজুহাতে হয়রানি করা হয়। আবার টাকা পেলে সব বৈধ হয়ে যায়। একাধিক দলিল লেখক জানান, সেরেস্তা না দিলে জমি রেজিস্ট্রি তো দূরের কথা, সীমাহীন হয়রানির শিকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের। তাই বাধ্য হয়েই সেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়।
কাগজপত্রে কোন প্রকার ঝামেলা দেখা দিলে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় অমানুষ কামরুজ্জামান কবিরকে।নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রত্যেক দলিল থেকে সেরেস্তার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলেও সিন্ডিকেটের ভয়ে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না। দলিল করতে আসা অনেকেই এটিভি সংবাদকে জানায়, সরকারি সকল ফি বাদ দিয়ে তাকে অতিরিক্ত ৮ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে। এরমধ্যে দলিল লেখক সমিতির ১ হাজার, ভেন্ডার ৩ হাজার আর বাকি ৪ হাজার টাকা অফিস খরচের জন্য দেয়া হয়েছে।
উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কামরুজ্জামান কবিরের কাছে দলিল রেজিস্ট্রি করতে আসা প্রত্যেক লোককে সরকারি নিয়মের বাইরে গুনতে হচ্ছে অনেক বেশি টাকা। দলিল রেজিস্ট্রি করতে আসা অসহায় মানুষগুলো জিম্মি হয়ে পড়েছে মানুষরূপী এই নরপিশাচটির কাছে। এ ছাড়াও দলিলের নকল তুলতে গেলে সরকারি ফি’র দ্বিগুণ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় বলেও জানা যায়।
এ বিষয়ে দুই উপজেলার (ভূঞাপুর ও ঘাটাইল) দায়িত্বে থাকা সাব-রেজিস্ট্রার কামরুজ্জামান কবিরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিডিয়ার কথা শোনা মাত্রই ফোন রেখে দেন। পরবর্তীতে অনেকবার ফোন করা হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।
উল্লেখিত বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক তদন্ত হওয়া খুবই প্রয়োজন। যেখানে বর্তমান সফল সরকার দুর্নীতিতে কোন ছাড় দেন না, সেখানে কি করে সরকারের এসব দুর্নীতিবাজরা বহাল তবিয়তে থাকে?