বিনোদন ডেস্ক, এটিভি সংবাদ
এক সময়ের রোমান্টিক সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা রিয়াজ। পুরো নাম রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক। শাবনূর, পপি, মৌসুমী, পূর্ণিমাসহ বিভিন্ন নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি উপহার দিয়েছেন বেশকিছু দর্শকপ্রিয় সিনেমা। যদিও বর্তমানে সেভাবে পর্দায় দেখা মিলছে না তার। অবশ্য যে রোমান্স ঘরানার সিনেমায় অভিনয় করতেন সে ধারার সিনেমাও এখন হচ্ছে না। সর্বশেষ চলতি বছরের ১০ মার্চ মুক্তি পায় তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ওপর ভিত্তি করে বানানো ‘রেডিও’ সিনেমাটি। এখন মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ এবং ‘রেডিও’।
পাঠককে সুখবর দেওয়ার মতো নতুন কোনো সিনেমা হাতে নিয়েছেন?
না, নতুন সিনেমা এই মুহূর্তে করা হচ্ছে না আমার। আমরা যে ধরনের সিনেমায় অভিনয় করতাম সে ধরনের সিনেমাও হচ্ছে না এবং আমারও নতুন কোনো সিনেমায় অভিনয় করা হচ্ছে না। আসলে এখন সিনেমার ধারাটিই একেবারে বদলে গেছে।
বলিউডের তারকারা তো দীর্ঘ বিরতিতেও সুপারহিট সিনেমা করছেন?
আমরা মনে হয় না তাদের মতো কিছু করতে পারি। তাদের মতো করে পারলে তো করতামই। আসলে ওদের ইন্ডাস্ট্রিটাই সেরকম। না হলে তো কিছু করার নেই। বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ওদের ইন্ডাস্ট্রি মিলিয়ে কিছু হবে না। বাংলাদেশে বাংলাদেশের মতোই চলবে।
শ্যাম বেনেগালের ঐ সিনেমাটির কী অবস্থা?
আমি জানি না। এ বিষয়ে পরিচালক, প্রযোজক এবং যারা এর নির্মাণের সঙ্গে আছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আমার কোনো আইডিয়া নেই।
যে চরিত্রে অভিনয় করে কতটা তুষ্ট আপনি?
দেখুন, এটা এমন জায়গা এখানে হ্যাপিনেসের শেষ নেই। আই অ্যাম নেভার সেটিসফায়েড। সেটিসফিকেশন যেদিন আসবে সেদিন তো মরেই যাব। আমরা যখন অভিনয় করি তখন মনে হয় ওইখানে আরেকটু ভালো করতে পারতাম। আরেকটু ভালোর পর মনে করি আরো ভালো করা যেত। আসলে তাজউদ্দিনের চরিত্রটা ছিল আমার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং। তবে আমি চেষ্টা করেছি। পরিচালক শ্যাম বেনেগাল আমার প্রশংসা করেছেন। সেটাও আমার জন্য আনন্দের। এছাড়া এটুকু বলতে পারি, এই বায়োপিকে যুক্ত হতে পারায় আমি হ্যাপি এবং গর্বিত।
সবাই দেশপ্রেমিক হলেও দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমায় দর্শক নেই- কারণ কি?
আসলে সিনেমা হচ্ছে এন্টারটেইনমেন্ট। এই এন্টারটেইনমেন্ট প্রেজেন্ট না করতে পারলে সে সিনেমায় যা-ই থাকুক দর্শক সেটা দেখবে না। আমরা জানি করলা তিতা- এই তিতাও আমরা খাই কিন্তু ক’জনে খেতে পছন্দ করেন। মিষ্টি সবাই পছন্দ করেন। এখন করলা যদি মিষ্টির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে বলেন এটা খেতে হবে এভাবেও হয়তো আমরা প্রেজেন্ট করতে পারি। তখন বিষয়টা কেমন হবে? আমি কি বোঝাতে পারলাম!
বিশ্বখ্যাত যুদ্ধের সিনেমাগুলো তো বিশ্বের সবাই দেখছে- এখানে কি তা হয়েছে?
দেখুন, মুক্তিযুদ্ধ ৫২ বছর পেরিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত অনেক সিনেমা হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। তো, কেন সে রকম সিনেমা হচ্ছে না আমি জানি না। বলতে পারব না। বলতেও চাই না। তবে আমরা চাই তা হোক। দর্শক প্রচুর হোক। তবে সাম হাউ যা হচ্ছে মনে হচ্ছে আমরা যেন একটা গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছি। এই দু’একটা উর্দু ডায়লগ- শালা বদমাশ হ্যায়, এদার আও, ওদার হ্যায়- দু-একটা ধর্ষণ, দু’টা খুন, মারামারি ইত্যাদি। এই হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা। সেই অর্থে অবশ্য আমাদের এখানে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা হয়নি। তবে হবে।
প্রেম, রোমান্স, অ্যাকশন- সব সিনেমাই করেছেন। কোনটা বেশি উপভোগ করেছেন?
আমি চেষ্টা করেছি সব ধরনের সিনেমায় অভিনয় করতে এবং এগুলো এনজয়ও করেছি। তবে আমি রোমান্টিক সিনেমাতেই সবচেয়ে বেশি এনজয় করেছি। দর্শকও এটা পছন্দ করেছেন। পৃথিবীতে যত বড় সিনেমা হয়েছে তার সবগুলোই রোমান্টিক ছবি। ‘টাইটানিক’ বলেন, ‘অ্যাভাটার’ বলেন বিশ্বখ্যাত রোমান্টিক সিনেমা। কিন্তু এমন কোনো অ্যাকশন সিনেমা পাবেন না যেটা রোমান্টিক সিনেমার মতো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়েছে। এ জিনিসটি মাথায় রেখেই আমি রোমান্টিক সিনেমায়ই বেশি এনজয় করি।
এখন সবাই অ্যাকশনধর্মী সিনেমায় ঝুঁকছেন- কারণ কি?
এখনকার নির্মাতারা রোমান্টিক সিনেমা বানাতে পারছেন না বলেই তো অ্যাকশনধর্মী সিনেমায় ঝুঁকে পড়ছেন। সে কারণে শিল্পীরাও রোমান্টিক সিনেমায় অভিনয় করতে পারছেন না। এই না হওয়াটা ডিপেন্ড করে নির্মাতার উপর। যুগের সাথে তাল মিলাতে যাওয়ায় সিনেমার ধরনটাই অন্যরকম হয়ে গেছে। রোমান্স এখন কোথায় চলে গেছে আমি জানি না। আগে রোমান্স যেভাবে প্রকাশ ঘটতো এখন সেটা সেই জায়গায় নেই। রোমান্স মানেই তো সেক্সুয়ালিটি নয়। রোমান্সের মধ্যে যে সূক্ষ্ম বিষয় থাকে সেই সূক্ষ্ম অনুভূতিতে নাড়া দিচ্ছে না। এখনকার রোমান্স ভোঁতা হয়ে গেছে। আমার মনে হয় এখন সবাই রোমান্সকে সেক্সের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন।
রোমান্স তো শাশ্বত, আবার কি আমাদের সিনেমায় রোমান্স ফিরবে?
নাহ্, আমি সিনেমা নিয়ে কথা বলতে চাই না। পরে আবার বলবে, রিয়াজ ভাই এটা বলেছেন- ওটা বলেছেন। অ্যাকশন সিনেমা তো হবেই। অ্যাকশন সিনেমার মধ্যেও অনেক রোমান্টিক সিনেমা হয়েছে। সেই অর্থে বলতে পারি আমাদের এখানে এখন একটা ‘মনপুরা’র মতো সিনেমা হচ্ছে না। একটা ‘হৃদয়ের কথা’ ‘কি যাদু করিলা’ বা একটা ‘মনের মাঝি তুমি’র মতো সিনেমা দেখছি না।
ওটিটি মাধ্যমটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে- এ মাধ্যমে আপনার অভিনয়ে আগ্রহ আছে?
হ্যাঁ, নতুন এই প্ল্যাটফর্মটি ভালো করার চেষ্টা করছে। কিছু কন্টেন্ট আমার নজরে এসেছে। আমি তো টেলিভিশনের নাটকেও অভিনয় করেছি। সে রকম গল্প ও চরিত্র হলে এ মাধ্যমটির প্রতি আমারও আগ্রহ আছে।