অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
ভূমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির বিষয়ে ভূমিমন্ত্রীকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) রাতে জাতীয় সংসদে একটি বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে অভিযোগ এসেছে, যা দুঃখজনক।
জেলায় জেলায় ভূমি অধিগ্রহণের যে শাখা আছে, সেখানে বড় দুর্নীতির ঘটনাগুলো ঘটে বলেও উল্লেখ করেন জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য।
ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘অতি সম্প্রতি ৫ জুলাইয়ের পত্রিকা যদি দেখেন, মানিকগঞ্জে সরকারি প্রকল্পে অধিগ্রহণের আগেই জমি কিনে নেন মন্ত্রী ও তাঁর ছেলেমেয়ে। জমি অধিগ্রহণের সময় শতকোটি টাকা বাড়তি নিতে প্রকল্প পাসের আগেই জমি ক্রয় এবং কৌশলে দলিলমূল্য বৃদ্ধি। প্রকল্পটি হচ্ছে সরকারি ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগসের মানিকগঞ্জে কারখানা স্থাপন। সেখানে দুঃখজনকভাবে আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে সংবাদপত্রে, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভূমি ক্রয় করেছেন ৬ দশমিক ৩৯ একর, ছেলে কেনেন ৩ দশমিক ১২ একর, মেয়ে কেনেন ১১ দশমিক ১৪ একর, আরেক ফুফাতো ভাই কেনেন ৫ দশমিক ৫৪ একর।’
পীর ফজলুর রহমানের বক্তব্যের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সংসদের অধিবেশনকক্ষে উপস্থিত ছিলেন না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিজ জেলা মানিকগঞ্জে সরকারি ওষুধ কোম্পানি এসেনসিয়াল ড্রাগসের একটি কারখানা স্থাপনের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই কারখানার জন্য প্রস্তাবিত সাড়ে ৩১ একর জমির মধ্যে ২০ একর ৬৫ শতাংশ জমি মন্ত্রী, তাঁর ছেলে ও মেয়ে কিনেছেন। এর বাইরে মন্ত্রীর ফুফাতো ভাই শামীম মিয়া কিনেছেন আরও ৫ একর ৫৪ শতক জমি। এ নিয়ে গত বুধবার(৫ জুলাই) দেশের শীর্ষ সংবাদ মাধ্যমে ‘আগেই জমি কিনে নেন মন্ত্রী ও তাঁর ছেলেমেয়ে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জমি অধিগ্রহণের সময় শতকোটি টাকা বাড়তি নিতে প্রকল্প পাসের আগেই জমি কিনে নিয়ে কৌশলে দলিলমূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকার জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে সর্বশেষ মূল্যের তিন গুণ বেশি টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মেয়ে সাড়ে ৭ কোটি টাকায় যে জমি কিনেছেন, সেটা সরকার অধিগ্রহণ করলে দিতে হবে ৪০ কোটি টাকা।
জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে দুর্নীতি হচ্ছে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, এর আগে কক্সবাজারেও ভূমি অধিগ্রহণ কার্যালয়কে ‘দুর্নীতির হাট’ বলে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। খবরে প্রকাশিত হয়েছিল, সেখানে ১৫ শতাংশ কমিশন (জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে) নেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন বা ‘স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি (অ্যামেন্ডমেন্ট)’ সংশোধনের জন্য আনা বিলের ওপর আলোচনায় পীর ফজলুর রহমান আরও বলেন, ভূমিমন্ত্রী অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয় চালাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে এসব দুর্নীতি ও লজ্জাজনক ঘটনা যাতে না ঘটে, সেদিকে ভূমিমন্ত্রী দৃষ্টি দেবেন।