সৈকত মনি, এটিভি সংবাদ
মহাসমাবেশের দুই দিন আগে থেকে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আটক অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের সাত শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ঢাকা থেকে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে আটকের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁদের নতুন-পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।
রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকা থেকে গত দুই দিনে ৪১১ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন মামলার আসামি। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আটক বা গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। তবে আদালত সূত্র জানায়, গত দুই দিনে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিএনপির ৪৭৩ নেতাকর্মীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে
গতকাল দুপুরে হোটেলটিতে গিয়ে কথা বলে আরো জানা যায়, বুধবার রাত ১১টা থেকে ১২টার দিকে অর্ধশতাধিক সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ হোটেলের বিভিন্ন কক্ষ থেকে অন্তত ৪০ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় তারা হোটেলটির সিসিটিভি ও ডিভিডি নিয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে চারজনকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। একইভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৬৬ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এই আটক পুলিশের নিয়মিত অভিযানের অংশ বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। গতকাল বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আসন্ন আশুরা ও বড় দুটি দলের সমাবেশে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সন্দেহজনক ব্যক্তি ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের আটক করা হচ্ছে, যা পুলিশের নিয়মিত অভিযানের অংশ।
আদালতে স্বজনের ভিড়
আটক হওয়া ব্যক্তিদের অনেককে পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। এ কারণে দুই দিন ধরে আদালতের সামনে আটক ব্যক্তিদের স্বজনরা ভিড় করছে।
মোহাম্মদপুর থেকে জামাল নামের বিএনপির এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দাবি করে তাঁর ভাই সোহেল বলেন, ‘কোনো অপরাধ ছাড়া বুধবার রাতে পুলিশ আমার ভাইকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে আনা হয়।’ এভাবে গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত আদালতের সামনে অবস্থান করা অন্তত ২৩ জন স্বজন দাবি করে, কোনো অপরাধ ছাড়াই তাদের স্বজনদের আটকের পর পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুন নবী বলেন, যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তারা বিভিন্ন মামলার আসামি। এগুলো থানা পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। এটা বিশেষ কোনো অভিযান নয়।
টাঙ্গাইলে আটক ৭
বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ ছয়জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জেলা বিএনপি। একই রাতে নাশকতার মামলায় ঘাটাইল উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন রনিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চুয়াডাঙ্গায় আটক ৪
গতকাল চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় নাশকতার পরিকল্পনার সময় বিএনপি ও জামায়াতের চার নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
কিশোরগঞ্জে আটক ২
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়কসহ দুজন নেতাকে গতকাল দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে উপজেলা বিএনপি।
কঠোর অবস্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী
ডিএমপির একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য নয়াপল্টনের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে এপিসি ও জলকামান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও মাঠে কাজ করছেন। অন্যদিকে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে বাসে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ ও র্যাব। রাজধানীর আমিনবাজার, আবদুল্লাপুর, পোস্তগোলা, বাবুবাজার ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, পূর্বাচল ৩০০ ফুট রোড, আশুলিয়া, কামারপাড়া, বসিলা, গাবতলী, চিটাগাং রোডসহ রাজধানীতে শতাধিক চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ ও র্যাব। কমলাপুর রেলস্টেশন ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে র্যাব ও পুলিশের শতাধিক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সমাবেশ ঘিরে যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সমাবেশ ঘিরে গুজবসহ সাইবার স্পেসে যেকোনো ধরনের অপরাধ ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সাইবার নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ।
পুরান ঢাকায় কাউন্সিলরের বাসায় অভিযান
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৬ নম্বন ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মীর আশরাফ আলী আজম এবং তাঁর ছেলে ব্যারিস্টার মীর মুনতাহা আলীকে লালবাগের বাসা থেকে বুধবার রাতে ডিবি গ্রেপ্তার করেছে বলে দাবি করেন মীর আশরাফ আলী আজমের স্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ তাঁর স্বামীকে পিটিয়ে পা ও কোমর ভেঙে দিয়েছে। তাঁর ছেলে আইনজীবী পরিচয় দেওয়ার পরও তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে।
লালবাগ থানার ওসি হেলাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, বুধবার রাতে আশরাফ আলীর বাসায় অভিযান চালানোর সময় তিনি তিনতলার জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এতে তাঁর পা ভেঙে যায়। আশরাফ আলী বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে সাদা পোশাকে পুলিশ বুধবার রাতে চৈতী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালামের বাসায় অভিযান চালায়। দরজা ভেঙে বাসার ভেতরে ঢোকে তারা। তিনি বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক।
এটিভি/এস