ওবায়দুল কবির, এটিভি সংবাদ
কাজ শেষ করতে কত দিন লাগবে—এ প্রশ্নে স্থানীয় ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাসুম মোল্লা বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত রমজান মাসে কাজ শুরু করেছে। আশা করি মাস দুয়েকের মধ্যে টোল প্লাজা পর্যন্ত কাজ শেষ হবে।
কাজের ধীরগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ব্যস্ত সড়ক। এক পাশ বন্ধ করে অন্য পাশে কাজ করতে হয়। আবার পাশেই মাছের বাজার। এসব কারণে কাজ শেষ করতে সময় নিচ্ছে। তবে কিভাবে দ্রুত কাজ শেষ করে মানুষের দুর্ভোগ কমানো যায় আমাদের পক্ষ থেকে সে চেষ্টা করছি।’
এর আগে শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে নিমতলী পর্যন্ত ফ্লাইওভারটির মূল অংশের নিচের শোচনীয় অবস্থা চোখে পড়ে। এই অংশে স্থায়ী হতে চলেছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বাস-ট্রাকের পার্কিং, বিভিন্ন ধরনের দোকান, রিকশা-ভ্যানের গ্যারেজ, ঘোড়ার আস্তাবল। কেউ কেউ আবার খুপড়ি ঘর বানিয়ে বহাল তবিয়তে বসবাসও করছেন। কর্তৃপক্ষের নজরদারিও নেই।
অভিযোগ রয়েছে, যারা এগুলো দখল করে রেখেছে তারা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মচারী ও পুলিশের অসাধু অংশের প্রশ্রয়ে তারা বেপরোয়া।
ভুক্তভোগীরা জানান, রাজধানীর সায়েদাবাদ, গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী সড়কের যানজট কমাতে হানিফ ফ্লাইওভার স্থাপন করা হয়। কিন্তু ওপরে যানবাহনের গতি বাড়লেও নিচের সড়কের চিত্র পাল্টায়নি। বরং দখল, দূষণ ও সংস্কারের অভাবে দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। ফ্লাইওভারের নিচে গাছ লাগানোসহ দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তৈরি করার কথা থাকলেও তা হয়নি।
ফ্লাইওভারের দুই পাশের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, রাতের বেলায় নিচের অংশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। অনেক গণপরিবহনের রাতের ঠিকানা এখানে।
যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ফ্লাইওভারের নিচের অংশে দেখা যায়, ময়লার ভাগাড়, মল-মূত্রের দুর্গন্ধ এড়াতে কয়েকজন নাকে হাত চেপে হাঁটছেন। যাত্রাবাড়ী মাছ বাজারের সামনে ফ্লাইওভারের নিচের অংশে রাখা হয়েছে সারি সারি মাছ রাখার বাক্স। যাত্রাবাড়ী অংশের শুরুর নিচের অংশে বসেছে সবজির বাজার এবং এক পাশে রিকশা-ভ্যানের গ্যারেজ।
দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার গোলচত্বরের প্রায় ৩০ শতাংশজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে ব্যক্তিগত নার্সারি। পাশেই রয়েছে পুলিশের একটি ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম। কিন্তু সেখানে কোনো পুলিশ সদস্য নেই। রুমের ভেতর ময়লা-আবর্জনা। রয়েছে একাধিক দোকানপাট। এখানে দোকান করার অনুমতি কিভাবে পেলেন—এই প্রশ্নে বেশির ভাগ দোকানি নিরুত্তর থাকেন।
কাপ্তান বাজার এলাকার বাসিন্দা আজহার উদ্দিনের দাবি, ‘নানা রকমের দুর্গন্ধের কারণে ওই এলাকায় সব সময় নাক-মুখ ঢেকে চলাচল করতে হয়। সেখানে ফ্লাইওভারের নিচের অংশে দেয়াল তুলে মুরগির দোকান ও খাবারের হোটেল বসানো হয়েছে।
ফ্লাইওভারের নিচে গুলিস্তান এলাকায় দেখা যায় জুতার গোডাউন স্থাপন করা হয়েছে। চানখাঁরপুল এলাকায় ঘোড়ার আস্তাবল ও অস্থায়ী দোকানে সড়কের অনেকটাই বেদখল হয়ে গেছে। বঙ্গবাজার থেকে নিমতলী গেট পর্যন্ত ঘোড়ার বিষ্ঠার দুর্গন্ধে টেকা দায়। যাত্রাবাড়ী-নিমতলী অংশে ফ্লাইওভারের নিচে অনেক স্থানে প্রস্রাবের দুর্গন্ধে পথচারীদের চলাচল করতে হয় নাকে হাত চেপে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, এই ফ্লাইওভারের নিচের অংশ অবৈধ দখলমুক্ত করে সরকার যদি যথাযথ ব্যবহারের উদ্যোগ নেয় তাহলে তা নাগরিক ভোগান্তি কমাবে। যানজটমুক্ত অবস্থায় নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত হবে। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয় জরুরি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। শিগগিরই আবার অভিযান চালানো হবে। এ ছাড়া ফ্লাইওভারের নিচের অংশে নান্দনিক স্থাপনা করার লক্ষ্যে টেন্ডার হয়েছে। পর্যায়ক্রমে কাজ শুরু হবে।