ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী নওরীন নুসরাত স্নিগ্ধার (২৬) ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিকেলে সাভারের আশুলিয়ার পলাশবাড়ী নামাবাজারের পাশে বিজয়নগর রোডে আব্দুর রহিমের মালিকানাধীন বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক জি এম আসলামুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নওরীন নুসরাত স্নিগ্ধা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও টাঙ্গাইল জেলার সদর থানার ইসলামবাগ গ্রামের খন্দকার নজরুল ইসলামের মেয়ে।
“আসুন একটু জাজমেন্টাল হই,
অক্সিজেন শব্দটার সাথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এখন বেশ পরিচিত। আমার নিউজফিড তো অক্সিজেনময়। নিশ্চয়ই আপনাদেরও? কারণ তো আমাদের সবারই জানা। তবুও সবার সুবিধার্থে আরেকটু সাম-আপ করা যাক।
আপনারা এখন মেয়েটিকে নিয়ে ট্রোল করছেন, জাজমেন্টাল হচ্ছেন, প্রেম-প্রেমিক-হালাল-হারাম-রমজান মাস-লজ্জা-আবেগ-পরিবার সম্পর্কে জ্ঞান বিতরণ করছেন। বিশ্বাস করুন, আপনারা যারা এই কাজগুলো করছেন তাদের অনেককেই আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি।
কেন হব? কারণ, সাইকোলজিস্টদের মতে, যারা একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়, তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা আরো বেড়ে যায়। অনেকেই আবার মেয়েটি বেঁচে যাওয়াতে তাকে প্রচলিত আইনে শাস্তির আওতায় আনার কথা বলছেন। দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারা অনুযায়ী- কোনো ব্যক্তি যদি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে এবং অনুরূপ অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে কোনো কার্য করে, তবে উক্ত ব্যক্তি এক বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হইবেন। কিন্তু তারা নিশ্চয়ই দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা সম্পর্কেও অবগত। ৩০৬ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি আত্মহত্যা করে, তবে যে ব্যক্তি আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনা দান করবে, উক্ত ব্যক্তি দশ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে, তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।
এবার আপনারা যারা সদ্য আত্মহত্যাচেষ্টাকারী মানসিক বিপর্যস্ত একটা মেয়েকে নিয়ে ট্রোল করে নিজেদের আত্মার পরিশুদ্ধি করছেন- আপনাদের এই ট্রোল যে তার আরো বেশি মানসিক বিপর্যয়ের কারণ হবে না; এর নিশ্চয়তা কোথায়? আপনাদের ট্রোলের শিকার হয়েই যদি সে আরো একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে এবং এ যাত্রায় সে সফল হয় প্ররোচনাকারী হিসেবে আপনারা ধারা ৩০৬-এর দণ্ড মাথা পেতে নিতে রাজি আছেন তো? নাকি জনে জনে আইনের ধারায় ফেলতে পারবে না বলে সাধু হয়ে যাবেন! নাকি এবার ছেলেটিকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন?
আত্মহত্যার চেষ্টা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় এবং অসমর্থনযোগ্য অপরাধ। কিন্তু সেই নিন্দার বহিঃপ্রকাশ এবং তার মাধ্যম কিংবা ভাষা কেমন হওয়া উচিত দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সচেতন জ্ঞান থাকা জরুরি বলে মনে করি। একই সাথে এটিও মাথায় রাখা উচিত সবার মেন্টাল স্ট্রেস নেওয়ার ক্ষমতা এক রকম নয়।
ডিপ্রেশনের ধরন কিংবা ডিপ্রেশনের সাথে লড়ার সক্ষমতাও সবার এক রকম নয়। একই সাথে মেয়েটার বয়সও বিবেচনার দাবি রাখে। একটা সদ্য প্রথম বর্ষের মেয়ে আবেগবশত ভুল করেছে। এই ভুল থেকে বাকিরা শিক্ষা নিতে পারি, নিজেরা সচেতন হতে পারি, অন্যদের সচেতন করতে পারি, মেয়েটার কাউন্সেলিংয়ের কথা ভাবতে পারি, ইবিতে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও সাইকিয়াট্রিস্টয়ের নিয়োগের কথা ভাবতে পারি। কিন্তু আমরা বেছে নিয়েছি মেয়েটাকে আরো বেশি মানসিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া, জাজ করা ও ট্রোল করাকে। আসুন তবে জাজমেন্টালই হই, তাতে যদি মস্তিষ্কে অন্তত অক্সিজেন সরবারহ বৃদ্ধি পায়।”