নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ :
জামালপুরের ইসলামপুর থানায় দায়েরকৃত একটি হত্যা মামলার বাদী ও সাক্ষীসহ ১০ জনের নামে ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর নাম ব্যবহার করে ‘ভুয়া’ সমন জারীর ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে এলাকাজুড়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (১৮ মে) বিকেলে হত্যা মামলার বাদী জামালপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবী মো. মোজাম্মেল হক এসব তথ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইসলামপুর থানা সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ ডিসেম্বর/২৩ জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষে উপজেলার গোয়ালেরচর ইউনিয়নের বোলাকীপাড়ার টুংরাপাড়া গ্রামের মৃত ময়দান আলীর স্ত্রী মজিয়া খাতুন (৬০) নিহত হন। এনিয়ে ওইদিন রাতে মজিয়া খাতুনের ছেলে হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে ১৭ জনের নামা উল্লেখ করে ইসলামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে ইসলামপুর থানায় তদন্তাধীন রয়েছে। হঠাৎ ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর নাম ব্যবহার করে ওই মামলার বাদী এবং তার চারজন স্বজনসহ মামলায় মানিত পাঁচজন সাক্ষী মোট ১০জনের নামে সমনজারির নোটিশ বোলাকীপাড়া গ্রামের বাড়ি ঠিকানায় ডাকযোগে আসে।
ওইসব নোটিশ ঘেঁটে দেখা গেছে, সিআইডির ‘অফিসার ইনচার্জ’ ও ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা’ পদ না থাকলেও সমনজারি নোটিশে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সমনজারি নোটিশে ইংরেজিতে লেখা প্রেরক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে জামালপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবী মো. আশরাফুল ইসলাম যিনি গত পাঁচ বছর আগে মৃত্যু বরণ করেছেন।
নোটিশে লেখা হয়েছে, বরাবর, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেট্রোপলিটন আদালত-১, ঢাকা। মাধ্যম:-বাংলাদেশ পুলিশ (সিআইডি), ঢাকা। বিষয়: পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ৩০২ ধারার অপরাধ করে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে নিরাপরাধ ব্যক্তিদের অভিযুক্তকরণ প্রসঙ্গে। সুত্র: ইসলামপুর থানার মামলা নং-০৯/২২৮ তাং ১৫/১২/২০২৩ ইং, ধারা-১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩০২/৩৪ পেনাল কোড। জনাব, বিনীত নিবেদন এই যে, সূত্রে বর্ণিত মামলার এজহারভুক্ত আসামীগণ উক্ত অভিযোগের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের আবেদন করেন। এই বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ (সিআইডি) কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করা হলে সিআইডি উক্ত বিষয়টি আমলে নিয়ে সরেজমিনে নিরপেক্ষ তদন্ত করে। এ ঘটনায় উপস্থিত জনতার করা ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, মামলার বাদী ও সাক্ষীগণ পরিকল্পিত ভাবে মজিয়া খাতুনকে হত্যা করেছে। সে কারণে ওই হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত আসামীগণ সম্পূর্ণ নির্দোষ। সে কারণে ২১ মার্চ ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ নোটিশ প্রাপ্তদের সশরীরে হাজির হতে বলা হলো।
এ বিষয়ে মামলার বাদী হেলাল উদ্দিন বলেন, গত ১৩ মার্চ সকালে গোয়ালেরচর ডাকঘরে কর্মরত একজন চিঠিবিলিকারী (পিওন) প্রত্যককের বাড়িতে গিয়ে একটি করে খাম ধরিয়ে দেন। সেখানে লেখা আছে, ‘আমার মা মজিয়া খাতুনকে না’কি আমরা নিজেরা মেরে উল্টো হত্যা মামলা করেছি। এনিয়ে আমি এবং মামলার সাক্ষীসহ ১০ জনের নামে বাংলাদেশ পুলিশ সিআইডি ঢাকা অফিসে অভিযোগ করা হয়েছে। সিআইডি তদন্ত করে আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়ায় আমাদেরকে ঢাকা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২১ মার্চ তারিখে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এরপর সমনজারির নোটিশ নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি তাতে কোনো পরামর্শ দিতে পারেননি। পরে আমি সিআইডির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সমনজারির নোটিশগুলো নিতান্তই ভুয়া ও ভিত্তিহীন।
জামালপুর জজ আদালতের আইনজীবী মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘হেলাল উদ্দিনের দায়ের করা হত্যা মামলাটি ইসলামপুর থানা-পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তাধীন কোনো মামলা অন্য কোনো সংস্থার তদন্ত করার এখতিয়ার নেই। এছাড়া নোটিশে প্রেরককারি হিসেবে যে আইনজীবী মো. আশরাফুল ইসলাম নাম ব্যবহার করা হয়েছে, তিনি বিগত প্রায় পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন। হত্যা মামলার বাদীকে মিথ্যা হয়রানি করতেই ভিত্তিহীন ও ভুয়া নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইসলামপুর থানার এসআই মো. রফিকুল ইসলাম তিনি বলেন, ‘মামলার বাদী হেলাল উদ্দিনসহ ১০ জনের নামে আদালতে হাজির হতে ডাকযোগে পাঠানো নোটিশের বিষয়ে আমি জানি না। তবে আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবী করেন।
এ ব্যাপারে ইসলামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুমন তালুকদার বলেন, ‘মামলার বাদী হেলাল উদ্দিনসহ সাক্ষীদের নামে পাঠানো সমনের নোটিশগুলো
যেহেতু থানা-পুলিশ জারি করেননি। সেহেতু এ বিষয়ে আমাদের করার কিছু নেই। তবে নোটিশের বিষয়ে আমাদের অবগত করলে, সেটা আইনানুসারে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান।