ক্রীড়া ডেস্ক, এটিভি সংবাদ :
সময় খারাপ গেলে যে কিছুই ভালো হয় না, তা হয়তো সাকিব আল হাসানের থেকে ভালো আর কেউই বলতে পারবেন না। দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নাম সাকিব। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে খেলছেন তিনি, পারফর্মও করেছেন নিয়মিত। সেই সঙ্গে একমাত্র বাংলাদেশি ক্রিকেটার সাকিব, যিনি কখনো অফ ফর্মের কারণে দল থেকে বাদ পড়েননি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ২২ গজে যেন দেখাই যাচ্ছে না সাকিব। ব্যাট কিংবা বল—কোনো বিভাগেই যেন নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না একসময়ের ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে অলরাউন্ডারদের সবার ওপরে থাকা সাকিব।
তবে দীর্ঘ এক যুগ পর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অলরাউন্ডারের তালিকায় এক নম্বর থেকে পাঁচে নেমে আসেন তিনি। সেই সঙ্গে অনেকে বর্তমানে এই টাইগার পোস্টারবয়ের ক্রিকেটে তার নিবেদন নিয়ে তুলছেন প্রশ্ন। তবে তারা হয়তো অনেকে ভুলে গেছেন ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হারের পর সাকিবের অশ্রুসিক্ত সেই চোখের কথা। সতীর্থ মুশফিককে জড়িয়ে ধরে সেই কান্নার কথা। এই টাইগার অলরাউন্ডারের কান্নায় তখন নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে চলমান এবারের আসরে এখন পর্যন্ত মোট দুটি ম্যাচ খেলেছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের বিপক্ষে জয় পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। তবে এ দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে কিংবা বল হাতে দুই বিভাগেই নিষ্প্রাণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবগুলো আসরে খেলা সাকিব। লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বল হাতে উইকেট-শূন্য থাকার পর ব্যাট হাতে ১৪ বল খেলে করেন ৮ রান। এছাড়া সবশেষ ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মাত্র এক ওভার বল করতে দেখা যায় তাকে, তাতেও পাননি কোনো উইকেট। পাশাপাশি ব্যাট হাতে ৪ বল খেলে করেন ৩ রান।
তবে সাকিবে পারফর্ম নয়, বরং দলের বিপদের সময় এমন বাজে শর্ট খেলে আউট হওয়ার বিষয়টি মানতে পারছেন না টাইগার সমর্থকেরা। শুধু এ দুই ম্যাচ নয়। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে সবশেষ ১৯ ইনিংসে সাকিবের ব্যাট থেকে আসেনি কোনো ফিফটি। সবশেষ ১৯ ইনিংসে এই টাইগার অলরাউন্ডারের সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ৩৮, যা তিনি গত বছর জুলাইতে চট্টগ্রামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করেন। শুধু দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নয়, সবশেষ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন সাকিব। ২০২১ বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচ খেলে রান করেছিলেন ১৩১। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাঁচ ইনিংসে করেছেন মাত্র ৪৪।
গতকাল বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি র্যাংকিংয়ের সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, দীর্ঘ এক যুগ পর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের অলরাউন্ডারদের র্যাংকিংয়ের তালিকায় ৫ নম্বরে নেমে এসেছেন সাকিব। এর আগে ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর র্যাংকিংয়ের পাঁচে নেমেছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সাকিবের রাজ্য দখল করেছেন আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি। ২৩১ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে দুই ধাপ উন্নতি করে বর্তমানে রাজার সিংহাসনে এই আফগান অলরাউন্ডার। অন্যদিকে ২০৮ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে চার ধাপ পিছিয়ে বর্তমানে তালিকার পাঁচ নম্বরে আছেন টাইগার সাবেক এই অধিনায়ক।
তবে নামটা যখন সাকিব আল হাসান, তখন আশায় আপনি বুক বাঁধতেই পারেন। কেননা, অতীতের পরিসংখ্যান বলে, যখনই সমালোচনার মুখে পড়েন সাকিব। তখনই সাগরের মহাপ্রলয়ের মতো গর্জে ওঠেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। এর জন্য সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারে ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়ে বিষয়টি গোপন করার কারণে তিনি জানতেন তার ওপরে আসতে পারে বড় কোনো নিষেধাজ্ঞা। ক্রিকেট থেকে হতে পারতেন আজীবন নিষিদ্ধ। সেই শঙ্কা মাথায় নিয়ে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ২ সেঞ্চুরি ও ৫ হাফ সেঞ্চুরিতে টাইগার অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে আসে ৬০৬ রান, যা সেই আসরের সর্বোচ্চ রান ছিল। এছাড়া বল হাতে শিকার করেন ১১ উইকেট। তাই টাইগার সমর্থকদের বিশ্বাস, আবারও নিজের চেনা ছন্দে ফিরবেন সাকিব আল হাসান। হয়তো সেটা আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আবারও নিজের জাত চেনাবেন এই টাইগার পোস্টারবয়।