নেত্রকোনা থেকে মোস্তাফিজুর রহমান
দেশের প্রতিটি সেক্টরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। শিক্ষা খাতে দুর্নীতি, শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণীকক্ষ নির্মাণেও অস্বাভাবিক দুর্নীতি, এ আর নতুন কি এই সোনার বাংলাদেশ? কোন প্রকার দুর্ঘটনা ঘটলে সে দায়ভার নেবে কে? ঠিকাদার না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ?
জেলা নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার মাকরাইল নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের কাজ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সরজমিন ঘুরে এ অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের চিত্র দেখা গেছে। ওইদিন ঘটনাস্থল থেকেই অনিয়মের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাজীব উল আহসান ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাব- কন্ট্রাক্টর কিবরিয়াকে অবহিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়ার ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো সুফল মেলেনি। তবে এখনো কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
নিম্নমানের বিটবালু, ২ নম্বর ইট, বালু ও সিমেন্টের পরিমাণ কম দিয়ে নির্মাণ কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার শ্রী আরাধন সরকার। নিম্নমানের কাজের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্মাণাধীন কাজে থাকা একাধিক রাজমিস্ত্রিও স্বীকার করেন। তবে তাদেরকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সেই মোতাবেক কাজ করছেন বলেও জানান।
জানা গেছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সেই শ্রেণিকক্ষ নির্মাণকাজটি পান কলমাকান্দা উপজেলার ঠিকাদার শ্রী আরাধন সরকার। নির্মাণকাজের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে তড়িঘড়ি করে কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের জায়গাটি প্রায় হাঁটু পানি।
সেই পানির মধ্যেই ১০ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি দিয়ে কাজ শুরু করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ তৈরির কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের করা হচ্ছে। ওই শ্রেণিকক্ষ তৈরির কাজ বন্ধ করে শিডিউল অনুযায়ী কাজ করা উচিত। ওই বিদ্যালয়ে প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হচ্ছে।
মাকরাইল নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম বলেন, অফিস দপ্তরি আইয়ুব আলী কাজের ভালোমন্দ দেখভাল করে থাকেন। বিদ্যালয়ের পরিচালনা সমিতির সভাপতি বারমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমানের মুঠোফোনে কল করা হলে রিসিভ না হওয়ায় কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ঠিকাদার শ্রী আরাধন সরকার বলেন, মাকরাইল স্কুলের চলমান কাজটি আমিই এনে দিয়েছি। সবকিছুর দাম বৃদ্ধি থাকায় কাজ শুরু করার কথা ছিল না। জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর চাপে কাজ শুরু করেছি। তবে আপনার এদিকে নজর না দিলেও চলতো। জেলা থেকে শুরু করে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর এলাকার অনেক সাংবাদিকের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এলাকার সাংবাদিকরা আমার পারমিশন ছাড়া একটি কাজও করে না।
নেত্রকোনা জেলার এস এ ই শিক্ষা প্রকৌশলী শামিউল বশীর মুঠোফোনে জানান, নির্দিষ্ট লেভেল থেকে ১৮ ইঞ্চি নিচে যাওয়ার কথা। তবে নির্মাণাধীন জায়গাটি প্লেনলেনে ইস্টিমেট করা। গর্তের জায়গাটি স্কুল কর্তৃপক্ষ ভরাট করে দেবে। পেছনে একটি গাইডওয়াল করে দেবে। আমি দুটি উপজেলা দেখভাল করছি। অবশ্যই সরজমিন পরিদর্শন করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব উল আহসান বলেন, নিম্নমানের কাজের বিষয়টির খোঁজ নিবো। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত নয়, তারপরও আরও খোঁজ নেন।