নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবার হলের নিরাপত্তা প্রহরীকে মারধর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারীরা।
রোববার ভোর ৬টার দিকে হল গেটে হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের নেতৃত্বে তাকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় আহত নিরাপত্তাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
আহত নিরাপত্তাকর্মীর নাম মনিরুল ইসলাম। এ ঘটনায় জড়িত অন্য নেতাকর্মীরা হলেন- মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সানি হাজারী, মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী আজিজুল হক আকাশ।
সিসিটিভি ফুটেজ ও হল সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ৬টা ২০ মিনিটের দিকে হলে প্রবেশ করেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক। তিনি নিরাপত্তাকর্মী মনিরুল ইসলামকে ডেকে এনে হল গেটের ভেতর বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। এ সময় তার সঙ্গে যোগ দেন অভিযুক্ত অন্য নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে আকাশ তাকে চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম বলেন, আতিক কখন হলে আসেন, কখন যায়, কখন কী করেন এসব তথ্য আমি নিয়াজকে পাঠাই এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আতিকের নেতাকর্মীরা আমাকে মারধর করেন। এরপর আমি বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে বাড়িতে অবস্থান করছি। আমি হল প্রাধ্যক্ষ স্যারের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত আতিকুর রহমান বলেন, ওই নিরাপত্তাকর্মী আমাদের তথ্য শিবির ও ছাত্রদলের কাছে পাচার করতেন। আমার ছোটভাইয়েরা তাকে হাতেনাতে আটক করে হল প্রাধ্যক্ষের হাতে তুলে দিয়েছি।
তবে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেলেও অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অপর দুই অভিযুক্ত। অভিযুক্ত আকাশ ও সানি বলেন, ‘আমরা ওই সময় ঘুমাচ্ছিলাম। এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আতিকের নেতৃত্বে কয়েকজন আমাদের এক নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর করেছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
প্রসঙ্গত, শনিবার দিবাগত রাত ১১টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ছাত্রলীগের দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় একপক্ষ অবস্থান নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে। অপরপক্ষ মাদার বখ্শ হলের দিকে অবস্থান নিয়ে এ হামলা চালায়। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
সংঘর্ষে জড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এবং শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদের পক্ষ। তবে সংঘর্ষ চলাকালে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারীদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর হয়ে হামলা চালাতে দেখা গেছে।
আবাসিক হল ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, গেস্টরুমে বসাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের গেস্টরুমে নিয়াজের কয়েকজন কর্মী বসে ছিলেন। এ সময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান ওরফে আতিক কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে গেস্টরুমে আসেন। আতিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। এ সময় আতিক নিয়াজের অনুসারীদের কিছুক্ষণের জন্য চলে যেতে বলেন।
কিন্তু নিয়াজের অনুসারীরা চলে যেতে অস্বীকৃতি জানান। পরে আতিক নিয়াজকে ফোনে করে তার অনুসারীদের যেতে বলেন; কিন্তু নিয়াজ তার অনুসারীরা সেখানেই থাকবে বলে আতিককে জানান এবং সেখানে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে আতিক তার অনুসারীদের নিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন।
খবরটি জানাজানি হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারীরা বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল গেটে এসে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারীরাও যোগ দেন।
একপর্যায়ে নিয়াজ ও তার অনুসারীরা হলের ছাদ থেকে মিছিল নিয়ে সভাপতির অনুসারীদের ওপর ইটপাটকেল ও লাঠিসোটা নিক্ষেপ করে হলগেট দখলে নিয়ে তালা দেন। কিছুক্ষণ পর মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও গালিবের অনুসারীরাও পাল্টা আক্রমণ চালান। এ সময় ছয়টি ককটেলের বিস্ফোরণ হয়। এছাড়া দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের হাতে রামদা ও লাঠিসোটা দেখা গেছে। দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলতে থাকে।