নিজস্ব প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সাবেক দুই প্রধান আজিজ আহমেদ ও বেনজীর আহমেদকে ঘিরে দুর্নীতির ভয়াবহ অভিযোগ ও বর্তমান একজন সংসদ সদস্যের হত্যাকাণ্ড—পরপর তিনটি ঘটনা সরকার ও আওয়ামী লীগকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। তবে এসব ঘটনার দায় নিতে চাইছেন না ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তাঁরা এগুলোকে পাশ কাটিয়ে ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে তুলে ধরছেন।
যদিও ঘটনাগুলো দেশজুড়ে নানা আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে সরকারি দলে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি গত বৃহস্পতিবার রাতে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকেও আলোচিত ঘটনাগুলো নিয়ে কোনো প্রকার কথা হয়নি বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দল ও সরকার এসব ঘটনার দায় নিতে নারাজ। সে কারণে এগুলো নিয়ে কোনো ফোরামে আলোচনার প্রয়োজন মনে করছেন না তাঁরা।
তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা সরকার ও দলের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরছেন। গতকাল শুক্রবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ব্যক্তি অপরাধ-অপকর্ম করতে পারেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার তাঁকে প্রটেকশন (সুরক্ষা) দিচ্ছে কি না। তিনি উল্লেখ করেন, অপরাধ করে কেউ পার পাবেন না। তিনি সাবেক আইজিপি হোন আর সাবেক সেনাপ্রধান হোন।
আলোচিত ঘটনাগুলো প্রকাশিত হয়েছে দেশ ও বিদেশ থেকে। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ২০ মে। আর ঢাকার একটি আদালত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন গত বৃহস্পতিবার। তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধেই ক্ষমতার অপব্যবহারসহ দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। তাঁরা দুজনই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুটি বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ফলে সরকার এর দায় এড়াতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন অনেকে তুলেছেন।
এরই মাঝে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন ভারতের কলকাতায়। দেশের বাইরে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর খুন হওয়ার ঘটনা জানা যায়। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এ খুনের ঘটনার পেছনে সীমান্তে চোরাচালান নিয়ে বিরোধের বিষয়কে তুলে ধরা হচ্ছে। টানা তিনবারের এই সংসদ সদস্য এবার নির্বাচনী হলফনামায় বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে বিভিন্ন সময় ২১টি মামলার কথা উল্লেখ করেছিলেন। যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই কোনোটিতে খালাস বা কোনোটিতে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি। কিন্তু এখন কলকাতায় গিয়ে তাঁর খুন হওয়ার ঘটনা যেমন নানা অভিযোগকে সামনে আনছে, একই সঙ্গে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি না থাকলেও বারবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।