নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে অসুস্থতার কারণে আর্থিক সহায়তার আবেদন করেন দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সম্পাদক ওবায়েদ আকাশ। কিন্তু কল্যাণ ট্রাস্টের গোপন তথ্য চলে যায় ডিজিটাল প্রতারক চক্রের হাতে। এ চক্রের হোতা ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার শরিফুল ইসলাম তাঁকে ফোন করেন ট্রাস্টের কর্মকর্তা ‘মনির’ পরিচয়ে।
তিনি বলেন, আপনার আবেদনের অর্থ বরাদ্দ হয়েছে– এটিএম কার্ডের নম্বর পাঠান, আপনাকে টাকা পাঠানো হবে। এ কথা শুনে আকাশ তাঁর ভাই প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের ব্যাংক কার্ড নম্বর দেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ব্যাংক হিসাব নম্বর থেকে ই-ট্রানজেকশনের মাধ্যমে চারটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এক লাখ ১৯ হাজার ৯২৮ টাকা সরিয়ে নেয় চক্রটি। তদন্তে যার সত্যতা পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসি বিভাগ।
২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। মামলার তদন্তে ডিজিটাল প্রতারণা চক্রের সন্ধান পায় সিটিটিসি। পরে ১৫ জানুয়ারি ঢাকার নিউমার্কেট এলাকা থেকে হোতা শরিফুল, ইব্রাহিম শেখসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিট। তাদের মধ্যে চক্রের হোতা শরিফুল ও ইব্রাহিম শেখ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তাদের কাছ থেকে মেলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। গত ৫ মে সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ।
তারা হলো– শরিফুল ইসলাম, ইব্রাহিম শেখ ওরফে সাগর শেখ, শরীফুল ইসলাম, রিপন শেখ, মো. জুয়েল, মো. হানিফ ও মো. রিয়াদ। এখন আসামিদের সবাই জামিনে।
এ ছাড়া আসামিদের জবানবন্দিতে ওঠে আসে সবুজ নামে একজনের নেতৃত্বে তারা মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের নামে প্রতারণার কাজ করত। তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করত মাতুব্বর, হানিফ, মুন্সী, মনির, লিটু, জুয়েল, শরিফুল, সুমন, রাজীব, সবুজ, আরিফ, রিয়াদ, আমির, শওকত, সজীব, আনোয়ার ও নজরুল। জবানবন্দিতে নাম আসা সবুজ ছাড়া আর কাউকেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে তদন্ত সূত্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ চক্রের নেতৃত্বে ছিল ভাঙ্গার মো. সবুজ। মামলা হওয়ার পর চোরাই পথে ইউরোপে পালিয়ে গেছে সে। তার সহযোগী আরিফ, রিয়াদসহ আরও বেশ কয়েকজনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে সহায়তার আবেদনকারী ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করত। পরে তা ভাঙ্গার শরিফুল ইসলাম, ইব্রাহিম শেখ ও টাঙ্গাইলের শরিফুল ইসলামের কাছে সরবরাহ করত। তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে কৌশলে তাদের কার্ডের তথ্য হাতিয়ে নিমেষেই অর্থ সরিয়ে নিত।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার সাত আসামির তথ্য বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, এ চক্রে ২০ জন সদস্য সক্রিয় রয়েছে। তাদের অধিকাংশের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকায়।
ভুক্তভোগী মনিরুজ্জামান মিডিয়াকে বলেন, পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করলেও টাকা ফেরত পাইনি। শুনেছি পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা তদন্তে সাতজনের নাম এসেছে। যাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।