এস এম জামান, এটিভি সংবাদ
দেশে অস্বাভাবিকহারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আজ বলতে হচ্ছে, নাজুক অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ। ছোট-বড় কোনো অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে করণীয় নিয়ে নানা রকম আলোচনা হলেও তা আলোচনায় থেকে যায়, হয়না কোনো স্থায়ী সমাধান। ফলে কোনো ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এ বিষয়ক কোনো ত্রুটি থাকলে তা সমাধান যে জরুরি, এটি সংশ্লিষ্ট অনেকেই ভুলে যান।
এসব বিষয় যাদের নিয়মিত তদারকি করার কথা, তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে ভবন মালিকদের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ভুলে যাওয়ার কথা নয়। দেশে প্রায় ৯০ শতাংশ স্থাপনা অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে; এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ২২ শতাংশ। দেশের বহুতল ভবন, প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার এমন নাজুক পরিস্থিতি অল্প সময়ে হয়নি, যা বলাই বাহুল্য।
দেশে বহুতল ভবন, বিশেষত আকাশছোঁয়া ভবনের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। যেহেতু একটি বহুতল ভবনে বহু মানুষ বসবাস করে অথবা অবস্থান করে, সেহেতু এমন ভবনে অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করতে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা উচিত হলেও বাস্তবে এর ব্যত্যয় ঘটছে। যে কোনো শিল্পকারখানায় অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত সুবিধা থাকা বাধ্যতামূলক।
এ দেশে অনেক কলকারখানার ভবন নির্মাণে এসব বিষয় যথাযথ গুরুত্ব পায় না, তাও বহুল আলোচিত। কর্তৃপক্ষের দুর্বল নজরদারির কারণে শ্রমিকরা ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়ে শিল্পকারখানাগুলোয় কাজ করছেন। এসব খাতের দুর্নীতি রোধে শৈথিল্য প্রদর্শন করা হলে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হবে, যা বলাই বাহুল্য।
কোনো অগ্নিকাণ্ডে সম্পদের যে ক্ষতি হয় তা এক সময় পূরণ করা সম্ভব; কিন্তু যেসব জীবন্ত মানুষ পুড়ে ছাই হয়, এই ক্ষতি পূরণের উপায় কী?
এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশে শপিংমল-মার্কেট, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, হাসপাতাল-ক্লিনিক, আবাসিক হোটেল ও মিডিয়া সেন্টার রয়েছে এমন ৫ সহস্রাধিক স্থাপনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্থাপনা রয়েছে যেগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ।
জানা গেছে, দেশের শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল-ক্লিনিকের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা মোটেই সন্তোষজনক নয়। একজন অসুস্থ ব্যক্তির সবচেয় বড় ভরসার জায়গা হাসপাতাল-ক্লিনিকের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয় তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? দেশের বিদ্যমান আইনে বহুতল ভবন, শিল্পকলকারখানা ইত্যাদি স্থাপনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে তা মানা হচ্ছে না, বিশেষজ্ঞরা আলোচনায় বিষয়টি বারবার স্পষ্ট করেছেন।
বস্তুত ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও জাতীয় বিল্ডিং কোডে এ বিষয়ে নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না সংশ্লিষ্টরা। ফলে দেশে বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে; পুড়ে কয়লা হচ্ছেন শত শত মানুষ। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার এমন করুণ পরিস্থিতির কথা শুনতে হতো না।
দেশে এ বিষয়ক আইন থাকলেও সেসব যথাযথভাবে প্রয়োগ না হওয়ায় এমন নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেইে।
উল্লিখিত বিষয়ে আইন অমান্যকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় না আনলে সার্বিক পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হবে, এ বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।