atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > রাজধানী > বরিশালে বাড়ছে মশা, অতিষ্ঠ জনজীবন

বরিশালে বাড়ছে মশা, অতিষ্ঠ জনজীবন

বরিশাল প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ 

মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ বরিশাল নগরীর বাসিন্দারা। চলতি বছরের শুরু থেকে এ নগরীতে মশার উপদ্রব সীমা ছাড়িয়েছে। দিনে হোক, কিংবা রাতে কোনো সময়ই মশা থেকে রক্ষা নেই।

এদিকে মশকনিধনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) তেমন কার্যক্রম না থাকায় মশা বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্ষা শুরুর আগেই মশকনিধনে আগাম ব্যবস্থা না নিলে করোনার সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

বিসিসি সূত্রে জানা গেছে, ৫৮ বর্গকিলোমিটারের বরিশাল সিটিতে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ থাকে। ৩০টি ওয়ার্ডে বিভক্ত এ সিটির মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন মাত্র ৭০ কর্মচারী। আধুনিক সরঞ্জাম বলতে রয়েছে  দু’টি ফগার মেশিন। আরও রয়েছে ৭০টির মতো হস্তচালিত স্প্রে।

তবে যারা এসব পরিচালনা করছেন, তাদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ। ফলে তারা জানেন না কোথায় কোন প্রজাতির মশা রয়েছে। কোন মশার জন্য কী ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। আর কীটনাশক প্রয়োগের মাত্রার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা কতটুকু, এ বিষয়েও নেই সুনির্দিষ্ট ধারণা।

নগরীর রূপাতলী হাউজিং এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, “ছয়তলায় একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকি। মশার উৎপাত এতই বেশি যে সন্ধ্যার পর ছেলেমেয়েকে মশারির মধ্যে রাখতে হয়। মশার জ্বালায় বাসায় কোথাও একটানা বসে থাকা যায় না। মশার কামড়ে স্বাভাবিক কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু মশকনিধনে করপোরেশনের লোকজনের দেখা মেলে না।“

অভিযোগ করে তিনি বলেন, “নগরীর অন্য এলাকার তুলনায় এটি নিম্নাঞ্চল। সারা বছরই এ ওয়ার্ডে পানি জমে থাকে। এর মধ্যে নতুন নতুন বহুতল ভবন গড়ে উঠছে। এছাড়া রূপাতলী হাউজিং এলাকার পাশেই বাস টার্মিনাল। যার কারণে টায়ার ও পরিত্যক্ত টিউব যন্ত্রপাতি পরিত্যক্ত অবস্থায় প্রায় পড়ে থাকে। টার্মিনালের রাস্তার দুই পাশের ড্রেন ও নালায় অসংখ্য প্লাস্টিকের কাপ, পানির বোতল, কর্কশিটের বাক্স, ডাবের খোসা, ঠোঙা জমে আছে। এখানে প্রচুর মশা জন্মায়। কিন্তু এ এলাকায় সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটায় না।”

নতুন বাজার কালীমন্দির গলির বাসিন্দা রিপন দাস বলেন, “এই এলাকা হলো মশার কারখানা। সন্ধ্যার পর বাইরে বের হলে মশা যেভাবে ঘিরে ধরে মনে হয় উড়িয়ে নিয়ে যাবে। দিনেও মশা কামড়ায়। ২৪ ঘণ্টা কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। দুইদিন ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটাতে দেখেছি। মশা মরার কথা। অথচ মশার উপদ্রব একটুও কমেনি।“

ডেঙ্গুর আতঙ্ক বাড়ছে জানিয়ে রিপন দাস আরও বলেন, “সামনে বর্ষা মৌসুম। বৃষ্টি হলে এডিস মশা বাড়বে। আবার গরমে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলেও মশা বাড়বে। তাতে ডেঙ্গুর প্রকোপও বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।”

বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি শাহ্ সাজেদা বলেন, “নগরীর সবখানেই মশার উৎপাত। সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রম চালালেও মশা কমছে না। মশা নির্মূলে আগাম ব্যবস্থা না নিলে করোনার সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “আমি নিয়মিত ট্যাক্স দিই। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া আমার অধিকার। সেই জায়গা থেকে মশার থেকে রেহাই পেতে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি।”

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশালের বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, “মশার উপদ্রব বেশি। তাই জ্বর, মাথা ও চোখব্যথা, গায়ে ফুসকুড়ি বা র‌্যাশ এসব উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী সরকারি হাসপাতালে আসলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে।”

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, “মশা নিধন কর্মসূচি চলমান রয়েছে। নগরীর খাল ও ড্রেন, জলাশয়, ডোবা, নালা, নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে। খাল পুনঃখননের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”

নতুন কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কাজের গতি বাড়াতে আরও ১০ ফগার মেশিন কেনা হচ্ছে। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে মেশিনগুলো চলে আসবে। এ ছাড়া মশার কবল থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে ১৭ মার্চ থেকে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :