বাংলা গানের শিল্পীদের রয়্যালটি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই। পরিচিতি, জনপ্রিয়তা ও বাজারের ওপর ভিত্তি করে কোনো কোনো শিল্পী গান করার জন্য ৫ থেকে ৫০ হাজার বা ১ লাখ টাকা সম্মানী নেন। পরে সেই গান থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো রয়্যালটি তিনি পান না। যা কিছু প্রাপ্তি, যোগ হয় প্রযোজকের পকেটে। এমনকি রেডিও, টেলিভিশন, মঞ্চ, মুঠোফোনের ভিএএস, কোনো ক্ষেত্রেই যথাযথ সম্মানী পান না শিল্পী, গীতিকবি, সুরকার বা যন্ত্রসংগীতশিল্পীরা। এসব কি কাম্য? সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘এসব প্ল্যাটফর্ম থার্ড পার্টির মাধ্যমে দিনের পর দিন ব্যবসা করেছে। তখন তারা কাউকে জবাবদিহি করেনি, লভ্যাংশ নিয়েছে। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়, থার্ড পার্টির কাছ থেকে গান নেওয়া যাবে না, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে গান দিতে হবে। এরপর তারা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে লিখিত নিয়ে গানগুলো থেকে ব্যবসা করত। সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকারেরা আপত্তি জানালে গান প্রচার করত না।’
অডিও থেকে আয় কমে যাওয়ায় ভিডিওতে ঝুঁকেছেন সংগীতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বেড়েছে সংগীতচিত্রের দৌরাত্ম্য। এতে শোনার থেকে গান দেখার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সংগীতের বিদগ্ধজনেরা এ নিয়ে বিভিন্ন সময় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। অনলাইনে গান শোনা বা স্ট্রিমিং থেকে আয়ের পথ সুগম হলে হয়তো এ চিত্র হতো কিছুটা ভিন্ন। জিপি মিউজিক, ইয়োন্ডার মিউজিকের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান সে চেষ্টা করে শিল্পীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এমনকি ঘোষণা দিয়ে বন্ধ হয়ে যায় ইয়োন্ডারের কার্যক্রম। তবে আশার কথা হচ্ছে, এরই মধ্যে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বিশ্বখ্যাত স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠান স্পোটিফাই। এতে যুক্ত হলে হয়তো বাংলা গানের শিল্পীদের গান থেকে আয় নিয়ে কিছুটা স্বস্তি তৈরি হতে পারে।
গানের বাণিজ্যিক ব্যবহারের বিনিময়ে শিল্পীদের ‘সম্মানী’ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে কালেকটিভ ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন বা সিএমও গড়ে ওঠেনি। যেটা ছিল, তার ছিল না কোনো কার্যক্রম, জবাবদিহি ও নৈতিক বৈধতা। সম্প্রতি এ বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।