সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ
সিরাজগঞ্জে বন্যায় সব বিভাগে তেমন ক্ষতি না হলেও কৃষি বিভাগে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষক সূত্রে জানা গেছে। তবে এখনও ক্ষয়ক্ষতির পুরোপুরি হিসাব সম্পন্ন হয়নি। জেলা ত্রাণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালি ও শাহজাদপুর এই ৫টি উপজেলায় মোট ২২৮টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩ হাজার ৬২০টি পরিবারের ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭২ জন মানুষ।
জেলায় প্লাবিত হয়েছে ৫৬৯ বর্গ কিলোমিটার। বন্যার্তদের চিকিৎসার জন্য ২৩টি মেডিক্যাল টিম কাজ করে যাচ্ছে। ১২ হাজার ৫৯৯ হেক্টর জমির পাট, তিল, কাউন, গ্রীষ্মকালীন মরিচ, বিভিন্ন ধরনের সবজি, রোপা আমন বীজতলা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের জানান, বন্যায় তার ৩ বিঘা জমির পাট তলীয়ে গেছে। চাষ করতে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল কিন্তু পানিতে ডুবে তার সর্বনাশ হয়ে গেছে।
বড়পিয়ার চরের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২ বিঘা জমিতে পাট ও ৫ বিঘা জমিতে তিল ছিল তার, বানের পানিতে সব ডুবে গেছে। আর কিছু দিন গেলেই তিল ও পাট কাটা যেত, বন্যা এসে আমার সব শেষ হয়ে গেছে।
কাজিপুরের নাটুয়াপাড়া চরের কৃষক জেল হক জানান, এবছর ৫ বিঘা পাট, ২ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছেন, বন্যায় সব ডুবে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর জানান, বন্যায় জেলার ৫টি উপজেলার ১২ হাজার ৫৯৯ হেক্টর জমির আউশ ধান, রোপা আমন বীজ তলা, পাট, তিল, কাউন, বাদামসহ উঠতি ফসল নষ্ট হয়েছে। এখনও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব সম্পন্ন হয়নি। তবে ২/১ দিনের মধ্যে প্রকৃত হিসাব জানা যাবে।
এদিকে, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জেলার চৌহালি বেলকুচি, কাজিপুর ও শাহজাদপুরে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। গত ১ মাসে এই সব এলাকায় শতাধিক বাড়ি-ঘর, ১টি মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে বলে এলাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
এবিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, এবারের বন্যায় জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোথাও ক্ষতি হয়নি। তবে চৌহালি, বেলকুচি, শাহজাদপুরও কাজিপুরে কিছু এলাকায় ভাঙছে। ভাঙনকবলিত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় রোধে কাজ করা হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৮২টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত। এরমধ্যে সদর উপজেলার কেচুয়াহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ‘জেলায় ৮২টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত। সদর উপজেলার ১টি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়াও, ৩ হাজার হেক্টর গো-চারণ ভূমি এ বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় খামারিরা বিপাকে পড়েছেন।