atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > সারাদেশ > ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে না

ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে না

নিজস্ব প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্প কারখানা, নগরায়ণ, গ্রামীণ বাড়ি-ঘর, অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ ও ইটভাটায় ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এতে শত শত বিঘা জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে উর্বরতা হারিয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ছে আবাদি জমি। ইটভাটার মালিকরা কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে সারা দেশে ভেকু মেশিন দিয়ে এসব ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। সারা দেশে চলছে ফসলি জমির মাটি কাটা উৎসব। অথচ আইনে জেল, জরিমানার বিধান থাকলেও বন্ধ হচ্ছে না ফসলি জমির মাটি কাটা।

দেশের একমাত্র মাটি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) জানিয়েছে, ফসলি জমির উর্বর উপরি অংশের মাটি কেটে নেওয়ায় অনুর্বর জমির পরিমাণও বাড়ছে। দেশের মোট জমির ৭৮ দশমিক ৯০ শতাংশ মাটিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে এখন ফসল উৎপাদনে বেশি সার ব্যবহার না করলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না। এতে কৃষি উৎপাদন খরচ বাড়ছে।

এসআরডিআই সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে মোট জমির পরিমাণ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে জৈব পদার্থের ঘাটতি রয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। যা মোট ফসলি জমির ৭৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। ফসল উৎপাদন মাটির স্বাস্থ্যের ওপর সম্পূর্ণ নিভর্রশীল। মাটি হচ্ছে কৃষির মূল ভিত্তি। উর্বর মাটি না হলে ভালো ফসল উৎপাদন হয় না। সাধারণত ৪৫ শতাংশ খনিজ বা মাটির কণা, ৫ শতাংশ জৈব এবং ২৫ শতাংশ করে পানি ও বাতাস থাকা মাটিকে সুষম মাটি বলা হয়। একটি আদর্শ জমিতে জৈব পদার্থের মাত্রা ৩.৫ শতাংশ থাকা অতি প্রয়োজনীয় হলেও দেশের বেশির ভাগ জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ এক দশমিক ১৭ শতাংশ এবং কিছু কিছু জমিতে এর পরিমাণ ১ শতাংশের চেয়েও কম?অনুন্ধানে জানা গেছে, গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা, মাগুড়া, বগুড়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, হবিগঞ্জ, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, আশুলিয়া, শেরপুরসহ সারা দেশেই প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে একটি প্রভাশশালী মহল। তারা এসব মাটি ইটভাটা, খাল-বিল ও পুকুর ভরাট করতে সংশ্লিটদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে। অনেক জায়গায় নদীর পাড়ের জমির মাটিও বিক্রি করছে চক্রটি। এতে নদী ভাঙন বাড়ছে। এমনিতে দেশে জলবায়ুর প্রভাবে প্রতিদিন দুই শতাংশ জমি নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে।

এ বিষয়ে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, দেদার উর্বর মাটি কাটায় তিন ফসলি কৃষি জমি পরিণত হচ্ছে পুকুর ডোবায়। আবাদি জমির মাটি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। এতে আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে

কৃষিজমি। প্রভাবশালীরা আইনের তোয়াক্কা না করেই অবাধে চালাচ্ছে এ মাটির ব্যবসা। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিকরা মাটি বিক্রিতে অস্বীকার করলে, তাদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে। এসব মাটি ব্যবসায়ী স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই কৃষকরা লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। এতে যেমন ফসল ফলানোর জায়গা কমে যাচ্ছে, তেমনি ঝুঁকিতে পড়ছে ব্রিজ, রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি। এতে কৃষি জমির পাশাপাশি গ্রামীণ এবং পাকা রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে।

এদিকে, ফসলি জমির মাটি কাটলে জেল জরিমানার বিধান রেখে ১৯ জুন মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া পাস হলেও থেমে নেই ফসলি জমির টপ সয়েল (জমির মাটির উপরের অংশ) কাটা কর্মযজ্ঞ। আইনে কৃষি ও অন্যান্য ফসলি জমির টপ সয়েল কাটলে দুই বছর জেল খাটতে হবে। এছাড়া ভূমি সংক্রান্ত প্রতারণা, জালিয়াতি, অবৈধভাবে ভূমি দখল করলে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে একজনের জমি আরেকজন দলিল করে নিলে দুই থেকে সাত বছরের জেল খাটতে হবে। এমন বিধান রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩’-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

ভূমি জরিপ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মৌজা ও পস্নটভিত্তিক দেশের সব ভূমিকে ২০২৪ সালের মধ্যে ডিজিটাল ভূমি জোনিংয়ের আওতায় আনার পরিকল্পনা মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অগ্রসর হয়নি। ফলে ভূমিকে কৃষি, আবাসন, বনায়ন, জলমহাল, বাণিজ্যিক, শিল্প উন্নয়ন ও পর্যটন ইত্যাদি শ্রেণিতে বিভক্ত করে মৌজা ও পস্নটভিত্তিক জোনিং ম্যাপ প্রণয়ন করার কাজ থমকে আছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও ডেল্টা পস্ন্যান-২১০০ বাস্তবায়নের জন্য মৌজা ও পস্নটভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। যার মাধ্যমে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪১২টি মৌজা ম্যাপ তৈরি করা হবে। দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯৩টি উপজেলায় ৪ হাজার ৫৬২টি ইউনিয়নের ৫৬ হাজার ৩৪৯টি মৌজা এ প্রকল্পের আওতায় থাকবে। ইতোমধ্যে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। আগের দুই প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় তৃতীয় প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৫টি মৌজা ম্যাপ শিট সংগ্রহ করা হবে। এর ফলে তিন ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ সহজ হবে।

ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সংবাদমাধ্যমকে জানান, আমাদের উদ্দেশ্য টেকসই ও স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। আমরা চাচ্ছি ২০২৬ সালের মধ্যে বর্তমানে গৃহীত ও পরিকল্পিত সব প্রকল্পের পূর্ণ বাস্তবায়ন। ২০২৬ সালে আমরা এমন একটি ব্যবস্থা দেখতে চাই যেখানে খতিয়ানের দাগ শেয়ার হবে না এবং মালিকভিত্তিক খতিয়ান হবে। এটা হলে ভূমি নিয়ে মামলা মোকাদ্দমা ও সীমানা বিরোধ কমে যাবে। এনআইডি দিয়েই যেন পাওয়া যায় জমির সকল তথ্য এই ব্যবস্থা আমাদের পরিকল্পনায় আছে। এর মাধ্যমে ভূমির গুণাগুণ অনুযায়ী পস্নটভিত্তিক কৃষি, আবাসন, বাণিজ্যিক, পর্যটন, শিল্প উন্নয়ন ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে। সারাদেশে কৃষিজমি রক্ষায় প্রকল্পটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এর আওতায় তৈরি করা হবে মৌজা ও পস্নটভিত্তিক ডিজিটাল ভূমি জোনিং ম্যাপ ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা। সারাদেশে মৌজা ও পস্নটভিত্তিক ডাটাবেজও তৈরি করা হবে। এতে কেউ ফসলি জমির উর্বর মাটি কাটলে তা সঙ্গে সঙ্গে সার্ভারে সিগন্যাল দেবে।

এটিভি/এস

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :