নড়াইল, এটিভি সংবাদ :
নড়াইলে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে স্বামীর বাড়িতে গেলে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য রাসেল শেখের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (১৫ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার উত্তর ডুমুরিয়া গ্রামে মারধরের শিকার হন গৃহবধূ।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর নাম শান্তা আক্তার (৩৪)। তিনি ডুমুরিয়া গ্রামের সাফায়েত মোল্যার স্ত্রী ও যশোর সদর উপজেলার পিয়ারী মোহন রোডের মৃত কুদ্দুস আলীর মেয়ে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঘটনার দিন রাতে কালিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রাসেল শেখ ডুমুরিয়া গ্রামের হেমায়েত শেখের ছেলে ও বাঐসোনা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তিনি।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় উপজেলার নড়াগাতি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ। এদিকে, হত্যার হুমকি পেয়ে সময়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক আমানত ইসলাম পারভেজ।
অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, সাফায়েতের সঙ্গে শান্তার ৯ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী তাকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা শান্তাকে ফেলে সাফায়েত তার ৬ বছর বয়সী সন্তান নিয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে পালিয়ে ডুমুরিয়া গ্রামে চলে আসেন। যোগাযোগ করতে না পেরে শান্তা শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ডুমুরিয়া গ্রামে স্বামীর বাড়িতে আসেন।
এ সময় সাফায়েতের সহযোগিতায় স্থানীয় ইউপি সদস্য রাসেল শেখ শান্তার বুক ও পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধর করে হত্যার হুমকি দেয় এবং তার পরনের কাপড় টেনেহিঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
শান্তা আক্তার বলেন, আমার একটি ছেলে রয়েছে আর আমি এখন ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। রাসেল মেম্বারের পেটের আঘাতের কারণে আমার গর্ভের বাচ্চা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমি স্ত্রীর মর্যাদা চাই ও আমাকে নির্যাতনের বিচার চাই।
সাংবাদিক আমানত ইসলাম পারভেজ বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে নড়াগাতি থানায় যাই এবং নির্যাতিত গৃহবধূকে চিকিৎসার সহযোগিতা করতে চাইলে ইউপি সদস্য রাসেল থানার সামনেই আমার ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেন এবং আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়াসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
শান্তার স্বামী সাফায়েতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
ইউপি সদস্য রাসেল গৃহবধূকে পেটানোর অভিযোগ অস্বীকার করলেও সাংবাদিক পারভেজকে গালিগালাজ করার সত্যতা স্বীকার করেন। শান্তা ইতিপূর্বেও সাফায়েতের বাড়িতে এসেছে এবং নড়াগাতি থানায় অভিযোগ করার পর পুলিশ সেটিকে মীমাংসার চেষ্টা করেছে। শান্তা শুক্রবার আবার সাফায়াতের বাড়িতে গেলে সাফায়াতের বাবার ফোন পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। তবে শান্তার সঙ্গে কোনো কথা বলিনি আমি।
বাঐসোনা ইউপির চেয়ারম্যান মো. চুন্নু শেখ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এর আগেও ওই গৃহবধূকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।
কালিয়া হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. পার্থ বলেন, এই গৃহবধূর পেটে আঘাতের কারণে সামান্য রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তার গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়েছে কিনা পরীক্ষার পর জানা যাবে। তাকে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
নড়াগাতি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।