atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > প্রচ্ছদ > পেঁয়াজের পচন রোধে ৫০ মডেল ঘর তৈরি রাজবাড়ীতে

পেঁয়াজের পচন রোধে ৫০ মডেল ঘর তৈরি রাজবাড়ীতে

নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ : 

রাজবাড়ীতে পেঁয়াজের পচন রোধে ৫০টি মডেল ঘর তৈরি করেছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। যেখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে ১৫ হাজার মণ পেঁয়াজ। এ পদ্ধতিতে সারা দেশের পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণ হবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তথ্যমতে, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় রাজবাড়ীর ৫টি উপজেলাতেই প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ চাষ হয়। এ অঞ্চলে যে পরিমান পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, তা সারা দেশের ১৪ ভাগ। আর অবস্থানগত দিক দিয়ে পেঁয়াজ চাষে রাজবাড়ী জেলা তৃতীয়। এ বছর রাজবাড়ীতে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এর থেকে অন্তত ৪ লাখ মেট্টিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।

রাজবাড়ীর কৃষি বিপণন অধিদফতর তথ্যমতে, পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণে কৃষক-কৃষাণীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাজার সহযোগিতা করার লক্ষ্যে কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপপন কার্যক্রম প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ পেঁয়াজ পচন রোধ হবে ও আমদানি বন্ধ হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদফতর রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দিতে ৩০টি ও কালুখালীতে ২০টিসহ মোট ৫০টি মডেল ঘর তৈরি করেছে। এর প্রতিটি ঘরে সর্বনিম্ন ৩০০ মণ করে ৫০টি ঘরে অন্তত ১৫ হাজার মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হয়েছে।
 
সরেজমিনে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রাজধরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মো. লুৎফর রহমানের বসতবাড়িতে বিনামূল্যে কংক্রিট, টিন, বাঁশ দিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ উপযোগী একটি দৃষ্টিনন্দন মডেল ঘর তৈরি করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। সেই ঘরে ৫টি স্তরে ৩০০ মণের বেশি পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছেন ওই চাষি। আলো বাতাস প্রবেশের জন্য দিনের বেলা এসব ঘরের দরজা খুলে রাখা হয়।
 
পেঁয়াজ চাষি মো. লুৎফর রহমান বলেন, এতদিন ঘরের মধ্যে মাচা তৈরি করে পেঁয়াজ রাখতো চাষিরা। ওভাবে পেঁয়াজ রেখে বেশিরভাগ পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। যে কারণে লোকসান গুনতে হয়েছে। আর এই ঘরে পেঁয়াজ রেখে বছরের ৯ মাস মজুদ করা যাবে। এখন আর পেঁয়াজ পঁচা নিয়ে দুশ্চিন্তায় নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
 
একই গ্রামের আরেক কৃষক মো. আরিফুর রহমান বলেন, এই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই পেঁয়াজ চাষি। প্রতিটি বাড়িতে ৫০০ থেকে ৭০০ মণ পেঁয়াজ মজুদ আছে। পেঁয়াজের তুলনায় ঘরের সংখ্যা হয়েছে কম। এই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে একটি করে পেঁয়াজ রাখার ঘর প্রয়োজন। তারপরও সরকার যেটুকু করেছে তার জন্য ধন্যবাদ। আগামীতে আরও এমন ঘর বাড়ানোর দাবি করেছেন তিনি।
 
ইসলামপুর ইউনিয়নের করম চাঁদপুর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, একমাত্র পঁচে যাওয়ার কারণে সরকারকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। পচন ঠেকানো গেলে, আমদানিও ঠেকানো সম্ভব হবে। সরকার যেই ঘর তৈরি করে দিয়েছে তাতে উপকার তো হবেই, কৃষকরা লাভবানও হবে। আগামীতে এই অঞ্চলে পেঁয়াজ ও রসুন চাষ আরও বাড়বে।
 
জেলার কৃষি বিপণন অধিদফতর মাঠ কর্মকর্তা মো. রাজিব খান বলেন, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি ও কালুখালীতে কৃষি বিপণন কেন্দ্রের দেয়া এই ঘরগুলোতে ৫ জন করে কৃষক অন্তত ৩০০ মণ করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবে। প্রাকৃতিকভাবে টিন, বাঁশ, কাঠ ও কংক্রিট দিয়ে তৈরি করা। এ ঘর ২ বছর পর পর সামান্য মেরামত করে, অন্তত ২০ বছর ব্যবহার করা যেতে পারে। সরকারের দেয়া এই ঘরগুলো দেখাশুনা করবে কৃষি বিপণন অধিদফতর।
 
সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা রাজবাড়ীর চাষিদের সবচেয়ে কষ্টের বিষয় ছিল পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে না পারা। পেঁয়াজ সংরক্ষণাগারের অভাবে চাষিরা লোকসান গুণতো। বছরের শেষের দিকে ভালো দামটা পায়নি তারা। এখন তারা সারা বছর পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবে। এতে দেশের পেঁয়াজেই দেশের চাহিদা পূরণ হবে। কৃষিতে এমন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় কৃষকের ভাগ্যও পরিবর্তন হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :