atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > সম্পাদকীয় > গীবত কি? বা গীবত অর্থ?

গীবত কি? বা গীবত অর্থ?

এস এম জামান, এটিভি সংবাদ  

গীবত আরবী শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ পরনিন্দা, দোষারোপ করা, অনুপস্থিত থাকা, পরোক্ষে নিন্দা, পরচর্চা করা, কুৎসা রটনা করা, পিছনে সমালোচনা করা। অন্যের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করা, কুৎসা রটনা করা, পিছে সমালোচনা করা ইত্যাদি।

শরীয়তের পরিভাষায় গীবত বলতে বুঝায় কোন ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে এমন কথা বলা যা শুনলে সে তা অপছন্দ করবে।

গীবত করার মাধ্যম (চোখের ইশারায়, অঙ্গভঙ্গিতে, শ্রবণে ও লিখনে গীবত) পরনিন্দা কেবল মুখের বাক্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং চোখের ইশারায়, অঙ্গভঙ্গিতে, শ্রবণে ও লিখনের দ্বারাও গীবত হয়ে থাকে। সর্বপ্রকার গীবতই হারাম। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন, একদিন আমি হাতের ইশারায় এক স্ত্রীলোককে খর্বাকৃতি বললে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, হে আয়েশা তুমি গীবত করেছো, থুথু ফেলো। তৎক্ষণাৎ আমি থুথু ফেলে দেখলাম তা কালো বর্ণের জমাট রক্ত। এরূপে কোনো খোঁড়া কিংবা টেরা চক্ষুবিশিষ্ট ব্যক্তির অবস্থা অনুকরণ করার জন্য খুঁড়িয়ে হেঁটে কিংবা চক্ষু টেরা করে চাইলে তার গীবত করা হলো।

তবে কারো নাম উল্লেখ না করলে এতে গীবত হয় না। কিন্তু উপস্থিত লোকেরা যদি বুঝতে পারে যে অমুক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে তবে তা গীবত বলে গণ্য এবং হারাম হবে। ইবাদতের ত্রুটি-বিচ্যুতির উল্লেখপূর্বক সমালোচনা করাও গীবতের অন্তর্ভুক্ত। যেমন অমুক ব্যক্তি উত্তম রূপে নামাজ পড়ে না অথবা রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে না অথবা নফল নামাজ পড়ে না অথবা রমজানের সবগুলো রোজা রাখে না অথবা মাকরুহ্ ওয়াক্তে নামাজ পড়ে। তাহাজ্জুদের ওয়াক্তে কতক ঘুমিয়ে থাকলে শেখ সা’দী (রা.) তাদের সমালোচনা করেন এবং বলেন, এই লোকগুলো যদি তাহাজ্জুদ পড়তো তবে কতই না ভাল হত। সা’দীর পিতা একথা শুনে বলেন, কতই না ভাল হত যদি তুমি তাহাজ্জুদ না পড়ে এদের মত ঘুমিয়ে থাকতে। তাহলে এদের গীবত করার পাপ তোমার ঘাড়ে চাপত না।

কোন ব্যক্তি অভিনয়ের মাধ্যমে অপর ব্যক্তির দোষ ত্রুটির প্রতি ইঙ্গিত করলে তাও গীবতের অন্তর্ভূক্ত।গীবত করার কারণ বা মানুষ যে সব ক্ষেত্রে গীবত করে থাকে; মানুষ সব সময় নিজেকে বড় করে দেখে, এই আমিত্বের আরেক নাম আত্মপূজা। এটা শুরু হয়ে গেলে আত্মপ্রীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তখন তার আত্মত্যাগের মতো মহৎ বৈশিষ্ট্য দূরীভূত হতে থাকে। ফলে এ স্থানে দানা বাঁধে হিংসা-বিদ্বেষ। আবার হিংসা-বিদ্বেষ থেকেই অপরের প্রতি কু-ধারণার সৃষ্টি হয়, যা মানুষকে গীবত করতে বাধ্য করে। সুতরাং আত্মপূজা, আত্মপ্রীতি, হিংসা-বিদ্বেষ, কু-ধারণাই মানুষকে গীবত করতে বাধ্য করে।

গীবতকারী ও গীবত শ্রবণকারী উভয়ই সমান অপরাধে অপরাধী। এক সফরে হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত উমার (রা.) -র সাথে এক দরিদ্র খাদেম ছিল, সে সবসময় তাদের খেদমত করত। গন্তব্যে পৌঁছে তারা উভয়েই ঘুমিয়ে পড়লেন এবং কিছুক্ষণ পর সেও ঘুমিয়ে পড়লো তাদের উভয়ের জন্য খাবার তৈরি না করে। তাঁরা উভয়ে জাগ্রত হয়ে বলতে লাগলেন, এই লোকটা খুব ঘুমায়। তারা তাকে ঘুম থেকে তুলে মহানবী (সা.) -এর নিকট পাঠালেন। সে তার নিকট আবেদন করল, হে আল্লাহর রাসূল! হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত উমার (রা.) আপনাকে সালাম পাঠিয়েছেন এবং কিছু খাবার চেয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তারা উভয়ে আহার করেছে এবং তৃপ্ত হয়েছে।

তাঁরা উভয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আজ কি খেয়েছি? তিনি বলেন, তোমরা আজ ঐ খাদেমের গোশত খেয়েছ (গীবত করেছো) এবং আমি তোমাদের দাঁতে গোশতের রং দেখতে পাচ্ছি। তাঁরা উভয়ে এ কথা শুনে বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের ত্রুটি মাফ করুন এবং আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, আল্লাহর ক্ষমাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবে না, খাদেম যেন তোমাদের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে। (দিয়া আল-মুকাদ্দাসীর বরাতে আদদুররুল মানছুরে, কিমিয়ায়ে শাআদাত)।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :