atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > সম্পাদকীয় > চাই ধর্ষণমুক্ত সমাজ

চাই ধর্ষণমুক্ত সমাজ

এস এম জামান, এটিভি সংবাদ 

আজ সমাজের যেদিকে তাকাই না কেন শুধু একটি আর্তনাদ শোনা যায় তা হলো ধর্ষণের শিকার নারীদের আর্তনাদ। ধর্ষণ আমাদের দেশে একটি আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এমন দিন খুব কমই শোনা যায় যে আজ দেশের কোথাও নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এ সব ঘটনা আমাদের গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে ঠিকই; কিন্তু কয়েক দিন পরে নতুন কোনো ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ভাবতে গিয়ে আগের ঘটনাকে ভুলে যাই। আবার আর একটি ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু করি, চাপা পড়ে যায় ধর্ষণের কাহিনি। ঠিক একইভাবে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা আমাদের আবার ভাবিয়ে তুলেছে। দেশে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ধর্ষণ আমাদের জন্য অসম্মানজনক। নারী হলো মা জাতি। তাদের প্রতি সমাজের প্রতিটি মানুষের সম্মান দেখানো উচিত।

ধর্ষণের দৌরাত্ম্য কী পরিমাণ বেড়ে চলেছে তা দৈনিক খবরের কাগজগুলোর দিকে চোখ রাখলে বোঝা যায়। এখন যে শুধু ধর্ষণের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নয়- পরিবর্তন হচ্ছে ধর্ষণের ধরন। আগে যারা ধর্ষণের শিকার হতো তাদের বয়স সাধারণত ১৫-২০ বছরের মধ্যে হলেও বর্তমানে এর পরিধি আরও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন দেখা যায় ৫ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৭২ বছর বয়সি বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এক কথায় বলতে গেলে ধর্ষক নামের এ সব নরপশুর কাছে কেউ নিরাপদ নয়। মেয়েমাত্রই যেন তাদের কাছে ভোগের সামগ্রী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমরা দিন দিন যতই সভ্য হচ্ছি ততই যেন আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয় হচ্ছে। আমরা ধর্ষকের সঙ্গে বসবাস করতে পারি কিন্তু নির্যাতিত মেয়ের জন্য সুস্থ সমাজ দিতে পারি না। ধর্ষক নামের এ কুলাঙ্গারগুলোর নৈতিকতার কি পরিমাণ অধঃপতন ঘটলে মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণ করতে পারে? নিজের পরিবারের সদস্য দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় এমনকি ধর্মীয় প্রার্থনার স্থান পর্যন্ত বাদ পড়েনি। যেখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে যাবে সেখানেও ধর্ষকের দৌরাত্ম্য বিদ্যমান। তা ছাড়া আমাদের সমাজে অনেক লোক আছে যারা মনে করে কোথায় কে ধর্ষিত হয়েছে তাতে আমার কি আসে-যায়। কিন্তু তারা একটি বারের জন্যও ভাবে না, আজ যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে সেও কোনো পরিবারের মা, বোন অথবা কারও স্ত্রী। তেমনি কাল আমার পরিবারের কেউ এরকম সহিংসতার শিকার হবে না তার এমন নিশ্চয়তা আছে? ধর্ষণ নামক এ আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। বন্ধ করতে হবে একের প্রতি অন্যের দোষারোপ সংস্কৃতি। সমাজের নারী-পুরুষ সবাই মিলে প্রতিবাদ করতে হবে ধর্ষণের বিরুদ্ধে।

দেখা যায়, ধর্ষণের ঘটনার পর পুলিশ ঠিকই অপরাধীদের ধরে। কিন্তু শাস্তি পায় গুটিকয়েক অপরাধী। আসল অপরাধী আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়। তা ছাড়া অনেক সময় বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয় অনেকে। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে যেন কেউ বেরিয়ে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। অপরাধী যে দলের হোক না কেন তা বিবেচনা না করে তার অপরাধকে বিবেচনা করে শাস্তি দিতে হবে। ধর্ষণের অপরাধের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে অন্য অপরাধীদের কাছে তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। তা ছাড়া ধর্ষকদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি এমন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে তারা সমাজের কোথাও ঠাঁই না পায়।

আমরাই পারি এমন সমাজ গড়ে তুলতে যেখানে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, তাদের সম্মান অক্ষুণ্ন থাকবে। আসুন সবাই মিলে এগিয়ে আসি ধর্ষণমুক্ত সমাজ গড়তে।

ধর্ষকের লোলুপদৃষ্টির কারণে আমাদের নারীসমাজ আজ আতঙ্কিত। ধর্ষক নামের এই নরপশুগুলো সমাজের মারাত্মক ব্যাধি। ওদের বিরুদ্ধে তীব্র সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে ধর্ষণের বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে রাষ্ট্রকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশে ধর্ষণের আইন আছে শুধু নেই এর যথাযথ প্রয়োগ। ধর্ষণের আইন এখন অনেক শক্তিশালী কিন্তু বিচারহীনতার জালে আবদ্ধ আইনের ধারা। তাই শুধু আইন দিয়ে সমাজকে ধর্ষণমুক্ত করা সম্ভব নয়। সমাজের প্রতিটি মানুষের সাহায্য ও সহযোগিতা একান্ত জরুরি।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :