এস এম জামান, এটিভি সংবাদ
দেশে মরণনেশা মাদক ইয়াবা ও আইস (ক্রিস্টাল মেথ) থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। উপরন্তু বিভিন্ন জাতের মাদকের চালান আসা ও এর ব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
মাদক চোরাচালানিদের সংঘবদ্ধ একটি সিন্ডিকেট মিয়ানমারে উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগসাজসের মাধ্যমে চালানে চালানে বিভিন্ন ধরনের মাদক দেশে নিয়ে আসছে। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে এ সব মাদক পাচারের বড় ধরনের একটি রুট হয়ে আছে। সীমান্ত রক্ষা ও পাহারার সঙ্গে যে সব সংস্থা জড়িত তাদের নজরদারিকে ফাঁকি দিয়ে চালানে চালানে মরণনেশার মাদক আসার ঘটনা দেশ ও জাতির জন্য মারাত্মক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার।
মাদকের চালান আসা কেন রোধ করা যাচ্ছে না, কোথায় ঘাটতি, কোথায় জনবলের অভাব- এ সব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বেড়েই চলেছে। মাদকের অবাধ আসা ও নির্বিচার ব্যবহারে বিশেষ করে বর্তমান যুব সমাজের শেষ পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকছে সেটা ভীষণভাবে ভাবনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। মাদকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাওয়া না গেলে যুব সমাজও রক্ষা পাবে না। কারণ, মাদকের মূল ব্যবহারকারী যুব সমাজেরই বড় একটি অংশ বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যানে বার বার উঠে এসেছে।
মাদক নিয়ে দেশে পুরনো আইনে সংশোধনী হয়েছে। কিন্তু এই আইনে এ পর্যন্ত কারও সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ মৃত্যুদন্ড পাওয়ার ঘটনার রেকর্ড এখনও হয়নি দেশে। ফলে মাদক নিয়ে ভীতি সঞ্চারের বিষয়টি কাগজে-কলমে বলে মাদক কারবারি ও ব্যবহারকারীদের ধারণা। তবে বাহক যারা ধরা পড়ছে, তারা স্বল্প সময়ের জন্য জেল খেটে সহজে জামিনে বেরিয়ে আসছে। আর গডফাদাররা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বিপুল অঙ্কের অর্থের মরণনেশার নিষিদ্ধ মাদক উদ্ধারের ঘটনাটি সচেতন মহলকে নাড়া দিয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী থেকে ৫ কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইস উদ্ধার করেছে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)। এই পর্যন্ত সর্বশেষ উদ্ধারকৃত এই চালানটি প্রমাণ করেছে কীভাবে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ (আইস) জাতীয় নিষিদ্ধ মাদক বাংলাদেশে আসছে।
মূলত ‘মিয়ানমার টু বাংলাদেশ’ মাদক আসার একটি রুটে পরিণত হয়েছে। এ রুটে বিভিন্ন সময়ে স্বর্ণের চালানও আসছে। লাখ লাখ পিসের ইয়াবার চালান সীমান্ত গলিয়ে দেশে আসার বিষয়টি পানির মতো স্বচ্ছ। যে পরিমাণ ধরা পড়ছে বা উদ্ধার হচ্ছে তার চেয়ে বহুগুণে বেশি পার পেয়ে যাচ্ছে। দেশে মাদকের বিরুদ্ধে আইনকে যতই কড়াকড়ি অর্থাৎ এই জাতীয় মাদক ব্যবহারকারী, সরবরাহকারী ও বাহক যেই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে কারাদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড এমনকি মৃত্যুদন্ডের বিধানও করা হয়েছে। কিন্তু এত কঠোর আইন করার পরও মাদকের রুট যেমন বন্ধ হয়নি, তেমনি মাদকের ব্যবহারও হ্রাস পায়নি, উল্টো বেড়েছে বলেই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ উখিয়ায় আইসের যে চালানটি ধরা পড়েছে, এটার বাজার মূল্য কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির কর্মকর্তাদের মতে ২৫ কোটি টাকা। সূত্র জানিয়েছে, দেশে একের পর এক সেনা অভিযানে পার্বত্য অঞ্চলের গহীন অরণ্যে পপি চাষ যেমন কমেছে, তেমনি পপি ফুলের রস থেকে তৈরি মাদক হেরোইনের ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমেছে। কিন্তু নেশা গ্রহণের সঙ্গে যারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত এরা বর্তমানে ইয়াবা ও আইসের প্রতি আরও বেশিগুণে ঝুঁকেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে তরুণ সমাজের বড় একটি অংশ আগের চাইতে বেশি নেশার দিকে ঝুঁকেছে এবং নিজেদের ভবিষ্যতকে নিজেরাই ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষে বলতে হয়, দেশে মাদক আসা বন্ধ হচ্ছে না কেন? আমাদের ঘাটতি কোথায়? আপনি আপনার বিচার-বিশ্লেষণ মনেই রাখুন। আমরা আসছি আমাদের বিশ্লেষণ নিয়ে আগামীতে…