এস এম জামান, এটিভি সংবাদ
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বছর দু’য়েক আগে এক অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যদি ভালো খবরের শিরোনাম হয়, তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মা শান্তি পাবে। আমি শুধু তোমাদের আহ্বান করবো, ছাত্রলীগ যেনো খারাপ খবরের শিরোনাম না হয়।
কে শোনে কার বাণী! ছাত্রলীগ বোধ হয় পণ করেছে, তারা ভালো খবরের শিরোনাম হবে না। তাই বছরের পর বছর প্রায় নিয়মিতভাবেই ছাত্রলীগ খারাপ খবরের শিরোনাম হয়ে শুধু আওয়ামী লীগকে নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে গোটা সমাজের কাছে। ছাত্রলীগকে সামলানোর কথা বিভিন্ন সময়ে অনেকে বলেছেন এবং লিখেছেনও, কিন্তু ছাত্রলীগে পরিবর্তন নেই।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ সুকীর্তি হলো, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ। এক গ্রুপের হামলায় অন্য গ্রুপের কর্মী মাহাদি আকিব গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তিনি পুরো সুস্থ হয়ে তার স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনে ফিরে আসুন—এটা চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আশা করবো, ভবিষ্যতে যেনো ছাত্রলীগের কারণে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীর জীবন বিপন্ন হয়ে না ওঠে।
দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত ‘দুই নেতার প্রশ্রয়ে বেপরোয়া ছাত্রলীগের দুই পক্ষ’ শীর্ষক খবর থেকে জানা গেছে, ছাত্রাবাসে সিট দখল, ক্যাম্পাসে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের জন্যই মূলত এক সংগঠনের মধ্যে দুই গ্রুপের জন্ম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি কোনো নতুন ঘটনা নয়। গত দেড় মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ হয়েছে পাঁচবার আর মেডিকেল কলেজে এক বছরে দশবার সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। ভাবা যায়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী বলে দাবি করা একটি সংগঠন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেও দিব্যি চলতে পারছে! সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিতে পারে, কিন্তু একই নীতি-আদর্শের অনুসারী একটি সংগঠনের মধ্যে বিরোধ তৈরি হওয়া এবং দিনের পর দিন তা চলতে থাকা কি কোনো স্বাভাবিক ঘটনা?
জানা যাচ্ছে, চট্টগ্রামের দু’জন নেতার প্রশ্রয়ে চট্টগ্রাম ছাত্রলীগ বেপরোয়া আচরণের লাইসেন্স পেয়েছে। এই দুই নেতা হলেন সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। দুই নেতা যে ছাত্রলীগের দু’টি গ্রুপকে মদদ দিয়ে মারমুখী অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন, এটা কোনো গোপন বিষয় নয়। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও বিষয়টি অজানা থাকার কথা নয়।
এখন প্রশ্ন হলো, জেনেশুনে ছাত্রলীগের মতো একসময়ের ঐতিহ্যবাহী সংগঠনকে ব্যক্তিবিশেষের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় কেনো? এ থেকে কী লাভ হয় সংগঠনের? মানুষের কাছে ধিক্কার পাওয়ার মতো কাজ থেকে ছাত্রলীগকে বিরত রাখার দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা কি দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবেন না দেশবাসীর কাছে ছাত্রলীগের মান ক্ষুন্ন করবেন?