atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > সম্পাদকীয় > বিজয়ের মাসে হোক আমাদের ঐক্যের অঙ্গীকার

বিজয়ের মাসে হোক আমাদের ঐক্যের অঙ্গীকার

এস এম জামান, এটিভি সংবাদ

বছরের তিনটি মাস বাঙালির জীবনে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস। মার্চ স্বাধীনতার মাস। আর ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। এই মাসগুলো এলেই আমরা বাঙালি জাতি আলোড়িত হই, স্মৃতিকাতর হই।

চলছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল। তবে ১৬ ডিসেম্বরের আগেই দেশের অনেক অঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়েছিল। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় আমাদের মুক্তিবাহিনী বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছিল মুক্ত স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে। নয় মাসের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান ঘটেছিল। দূর হয়েছিল সব দ্বিধা-দোদুল্যমানতা।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা নৃশংস গণহত্যা শুরু করলে নিরস্ত্র বাঙালি রুখে দাঁড়ায়, ‘যার যা আছে’ তা নিয়েই শুরু করে প্রতিরোধ যুদ্ধ। অসহায় বাঙালি জাতির পাশে এসে দাঁড়ায় প্রতিবেশী ভারত। বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষকে প্রাণ বাঁচাতে ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। প্রাণের মায়ায় ভিটেমাটি ছেড়ে গিয়ে রোগব্যাধি, অনাহারে কতজনকেই তো প্রাণত্যাগ করতে হয়েছে। মানুষের জীবনে দুঃখদিন দীর্ঘ হয় না। রাতের শেষে ফোটে দিনের আলো। আমাদের মুক্তিযুদ্ধও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বাংলার ‘বিচ্ছু পোলাপান’দের কাছে পাকিস্তানি ‘ভোমা ভোমা মছুয়া সোলজার’রা ৯ মাসেই পরাভূত হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য উচ্ছ্বাস-উল্লাসের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান ভাঙার নীরব মনোবেদনাও কারও কারও মধ্যে তখন ছিল; যা ধীরে ধীরে না কমে, বরং বেড়েছে। পাকিস্তানের সামরিক পরাজয় মানেই যে পাকিস্তানি ধারার রাজনীতির চিরবিদায় ছিল না। ১৯৭১ সালে আমরা বাইরের শত্রুদের পরাজিত করেছি, কিন্তু আমাদের দেশীয় শত্রুরা তখন মন বদল না করে ভোল বদল করেছিল। আর অপেক্ষায় ছিল সুদিনের বা দিনবদলের।

আমরা বিজয় ধরে রাখতে পারিনি, নানা সময়ে কৌশলগত কারণে বা অন্য কোনো যুক্তিতে আপস করেছি। তাই আজ আমরা পরাজিত মানসিকতা নিয়ে বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠার চেষ্টা করি। আর যাদের আমরা পরাজিত ভেবেছিলাম, তারা আজ আমাদের ভুলের সুযোগ নিয়ে আমাদের ভেতরে ঢুকেই আস্ফালন করে! তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার হুমকি দিয়ে চরম ঔদ্ধত্যের পরিচয় দিতেও দ্বিধা করে না। ধর্মব্যবসায়ী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে আপস-সমঝোতা করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করা অসম্ভব।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর। ৫০ বছরে আমাদের যেমন অনেক অর্জন আছে, তেমনি পেয়ে হারানো এবং না পাওয়ার দুঃখ-বেদনাও আছে। একাত্তরের ডিসেম্বরে দেশ শত্রুমুক্ত হয়েছে ভেবে আমরা উল্লসিত হয়েছিলাম। দেশ যে সত্যিকার অর্থে শত্রুমুক্ত হয়নি, তা আমরা এত বছর পরে এসে বুঝতে পারছি। ওরা এখন স্বাধীনতার মূল স্থপতিকেই চ্যালেঞ্জ জানায়।

তাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে সব মান-অভিমান, দোদুল্যমানতা পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে সব গণস্বার্থবিরোধী অপশক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :