atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > রাজধানী > রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ গণনিয়োগ তদন্ত দ্রুত শেষ করলো কমিটি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ গণনিয়োগ তদন্ত দ্রুত শেষ করলো কমিটি

রাজশাহী প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্কিত ও অবৈধ গণনিয়োগ তদন্ত দ্রুততার সঙ্গেই শেষ করল কমিটি। শনিবার সকালেই কমিটির চার সদস্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান।

সকালে তারা রাবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. আনন্দ কুমার সাহার সঙ্গে তার দপ্তরে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন। কমিটি বিতর্কিত নিয়োগের তালিকাসহ বিভিন্ন নথিপত্র রাবির প্রশাসন বিভাগ ও রেজিস্টার শাখা থেকে সংগ্রহ করেন। দিনভর কমিটির সদস্যরা রাবি ক্যাম্পাসে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।

এদিকে দুপুরের দিকে বিদায়ী ভিসি প্রফেসর সোবহানকে ক্যাম্পাসে ডেকে পাঠান তদন্ত কমিটি। তিনি দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাসে এসে কমিটির মুখোমুখি হন। কমিটির সদস্যরা বিদায়ী ভিসিকে সোয়া ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রফেসর সোবহান পুনরায় পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। তার আগে প্রফেসর সোবহানের জামাতা ও গণনিয়োগের অন্যতম হোতা বলে পরিচিত শাহেদ পারভেজকেও কমিটি ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করে।

তদন্ত কমিটির প্রধান ইউজিসির সিনিয়র সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর শনিবার বিকালে মিডিয়াকে বলেন, কমিটি সাবেক ভিসি, ভারপ্রাপ্ত ভিসি, রেজিস্ট্রার থেকে প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের নেতা, সাধারণ শিক্ষক, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিতর্কিত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত কর্মকর্তাসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলেছে। আমাদের তদন্ত প্রায় শেষ হয়েছে বলতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৬ মে জারিকৃত পরিপত্রে বলেই দিয়েছেন এ নিয়োগ অবৈধ। সুতরাং মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছেন কারা কারা এ অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত তা শনাক্ত করা। জড়িতদের দায়দায়িত্ব নিরুপণ করে তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা জানা। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে পারব বলে আশা করছি। দোষীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন- সেটা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার।

এদিকে রাবির ভারপ্রাপ্ত ভিসি ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, শনিবার সকালেই তদন্ত কমিটির প্রধান ও ইউজিসির সিনিয়র সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলমগীরসহ কমিটির চার সদস্যই ক্যাম্পাসে পৌঁছান। কমিটিকে তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। কমিটির সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। বিশেষ করে গত ৬ মে নিয়োগকে কেন্দ্র করে রাবি ক্যাম্পাসে সংঘটিত সহিংস ঘটনার সাতজন প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দিও নিয়েছেন।

এদিকে রাবির প্রগতিশীল ও দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের শিক্ষকরা শনিবার দুপুরে প্রশাসন ভবনে গিয়ে তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলেন। তদন্ত কমিটিকে তারা বিদায়ী ভিসির বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির বিভিন্ন ফিরিস্তি লিখিতভাবে হস্তান্তর করেন। শিক্ষক সমাজ পৃথকভাবে একটি বিবৃতিও প্রকাশ করেন এ দিন। তাতে তারা বলেছেন- বিদায়ী ভিসি যে অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন তারা তার শাস্তি চান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাবির প্রগতিশীল ও দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজ তদন্ত কমিটিকে একটি নামের তালিকা দিয়েছেন, যারা বিদায়ী ভিসির পক্ষে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বিদায়ী ভিসির ভাগ্নে সাখাওয়াৎ হোসেন টুটুল ও ভায়রা ভাই আব্দুল বারীর নাম রয়েছে। এ তালিকাতে কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তার নামও রয়েছে।

এদিকে রাবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, রাবির এ গণনিয়োগ যেন বানরের পিঠা ভাগের মতোই ঘটনা। বিদায়ী ভিসি সোবহানের দেওয়া ১৪১ পদে নিয়োগের পূর্ণাঙ্গ তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের ৪১ নেতাকর্মীকে তৃতীয় শ্রেণীর পদগুলিতে চাকরি দেওয়া হয়েছে।

আবার ভিসিপন্থি শিক্ষকদের ছেলেমেয়ে স্ত্রী, কর্মকর্তাদের ভাই ছেলে মেয়েদের শিক্ষকসহ প্রথম শ্রেণির পদগুলো দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকরা পেয়েছেন প্রথম শ্রেণির পাঁচটি পদ। সাবেক ভিসির গৃহকর্মী, সবজি, ডিম ও মাংস সরবরাহকারীদের ছেলেমেয়েরা চাকরি পেয়েছেন।

রাবির শিক্ষক শিক্ষার্থীরা আরও জানান, কোন গরিব দুস্থ পরিবারের কেউ একটা চাকরি পেতেই পারেন।  কিন্তু বিদায়ী ভিসি এমনভাবে তা দিয়েছেন যা কোন নিয়মনীতির মধ্যেই পড়ে না।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক চিত্তরঞ্জন মিশ্রের ছেলে ইন্দ্রনীল মিশ্রকে কমিউনিকেশান্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, নিয়োগপ্রাপ্ত ইন্দ্রনীল মিশ্র পোষ্য কোটাতেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অযোগ্য হয়েছিলেন। বিএনপি আমলের সাবেক ভিসি প্রফেসর আলতাফ হোসেনের স্পেশাল ক্ষমতায় ভর্তির সুযোগ পায় ইন্দ্রনীল।

ভিসিপন্থি বলে বহুল পরিচিত ক্রপ সায়েন্সে বিভাগের অধ্যাপক খাইরুল ইসলামের স্ত্রী সাবিহা ইয়াসমিনকে সেন্টার ফর এক্সিলেন্স ইন টিচিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস বিভাগে নিয়োগ পেয়েছেন শিবির ক্যাডার মোহা. কামরুজ্জামান। ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষকের আত্মীয় তিনি।

এদিকে শুধু নিজের মেয়ে জামাতাকে চাকরি দেননি প্রফেসর সোবহান, জামালপুর বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সৈয়দ সামুদ্দিন আহমেদের জামাতা শাহরিয়ার মাহবুবকে গণনিয়োগের সুযোগে অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়ে গেছেন।

রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকাকে মন্নুজান হলের আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। শেখ ফজিলাতুন্নেসা হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নুরে আলম সিদ্দিকির স্ত্রী মাহফুজা আক্তার।

রাবির কলেজ পদির্শক অধ্যাপক আব্দুল গণির স্ত্রী ফারহানা একরাম তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। রহমতুন্নেসা হলের সহকারি আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থনীতির শিক্ষক মাহমুদ হোসেনের স্ত্রী বুরুজ-ই জোবাইরা।

প্রাণিবিদ্যার প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়া আসাদুজ্জামার জামাত বিএনপিপন্থি শিক্ষক হাবিবুর রহমানের ফেলো। সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়া আলীম আল আফরোজ মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক আব্দুল লতিফের ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণনিয়োগে স্বাক্ষরকারী উপ-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী তার ছেলে নাহিদ পারভেজকে দেওয়া হয়েছে নিম্নমান সহকারী পদে নিয়োগ। ঘটনার দিন ছেলে নাহিদ পারভেজ রাজশাহীর বাইরে থাকায় ইউসুফ আলী নিজেই তার ছেলের যোগদানপত্রে স্বাক্ষর করেন।

বিতর্কিত এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যুক্ত আরেক সহকারী রেজিস্ট্রার তারিকুল ইসলাম তার ভাই মাসুম আল শামীমের নামে নিয়োগপত্র ইস্যু করে নিয়েছেন। শামীম পেয়েছেন প্রাণ রসায়ণ বিভাগের সহকারী পদ। তারিকুল ইসলামের দাবি তার ভাই নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছেন। কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই কীভাবে তার ভাই যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন- জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলেননি।

গণনিয়োগের আরেক কুশীলব ও প্রফেসর সোবহানের ডান হাত নামে খ্যাত সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন অর রশীদের ভাই ফারহানুল ইসলাম মামুনও চাকরি পেয়েছেন। তবে তাকে কোন শাখায় দেওয়া হয়েছে- তা জানা যায়নি।

জানা গেছে, বিদায়ী ভিসি ও তার পরিবারের সদস্যদের চুল কাটতেন শামসুল আলম। তাকে স্টুয়ার্ট শাখার প্রহরী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিদায়ী ভিসির আসবাবপত্র বানাতেন কাঠমিস্ত্রি আব্দুস সামাদ; তাকে কাঠমিস্ত্রি পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। ভিসির বাড়িতে শাকসবজি ও তরিতরকারি সরবরাহকারী ফজলুল হকের মেয়েকে তৃতীয় শ্রেণীর পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে।

ভিসির বাড়ির মালি সাইফুল ইসলামের মেয়েকে রাবি মেডিকেল সেন্টারে আয়ার চাকরি দিয়েছেন। সাইফুল ইসলামের স্ত্রী মিনু খাতুন ভিসির বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। ভিসির বাসায় ডিম সরবরাহকারী আকলিমা খাতুনকে রহমতুন্নেসা হলের সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতাদের কিছু পদে নিয়োগ দিলেও অধিকাংশ পদে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে। এ নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বিদায়ী ভিসির জামাতা শাহেদ পারভেজ ও ভিসিপন্থি কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তা।

রাবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর আব্দুস সালাম বলেছেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীর কথা বাদ দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্ব স্ব বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির চাহিদা আসা জরুরি। প্ল্যানিং কমিটিকে অন্ধকারে রেখে এভাবে শিক্ষক নিয়োগের নজির কোথাও নেই।

তিনি আরও বলেন, তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছেন। তাদের আমরা সব ধরসের সহযোগিতা দিচ্ছি। প্রয়োজনীয় নথিপত্র সরবরাহ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে গত ৬ মে রাবির বিদায়ী ভিসি প্রফেসর ড. এমএ সোবহান শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিভিন্ন পদে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়ে পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। ওই দিনই এ নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসির সদস্য ড. মোহাম্মদ আলমগীরকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :