atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > জাতীয় > শপিংমল ও দোকানপাট খুলছে আগামীকাল

শপিংমল ও দোকানপাট খুলছে আগামীকাল

সৈকত মনি, এটিভি সংবাদ 

দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে কঠোর বিধিনিষেধ বা ‘লকডাউন’ ছেড়ে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ ফর্মুলার দিকে হাঁটছে সরকার। চলমান লকডাউন শেষে ২৮ এপ্রিলের পর আর লকডাউন থাকছে না। এর বদলে কঠোরভাবে শতভাগ ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হবে। এরই অংশ হিসাবে আগামীকাল (২৫ এপ্রিল) রোববার থেকে শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেওয়া হচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়ে শুক্রবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এ ছাড়া আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে গণপরিবহণও চলাচলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে-এমন আভাস দিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। শপিংমল ও দোকানপাট খোলা সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে বলা হয়-মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয় বিবেচনা করে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের (বিধিনিষেধ) মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাল (রোববার) থেকে দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা থাকবে। এতে আরও বলা হয়-‘করোনাভাইরাসজনিত রোগের (কোভিড-১৯) বিস্তার রোধে শর্তসাপেক্ষে সার্বিক কার‌্যাবলি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আগের নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় ব্যাপকসংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয় বিবেচনা করে নির্দেশনা জারি করা হলো, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাজার/সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, চলমান ‘লকডাউন’ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে। দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনায় রেখে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোববার থেকে দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কেউ যেন ‘মাস্ক ছাড়া’ কেনাকাটা না করে সে বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধীরে ধীরে সবকিছু খোলার পাশাপাশি গণপরিবহণ ও সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলার কথাও জানান তিনি।

দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও গণপরিবহণ কবে চলবে-জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, গণপরিবহণ চালুর বিষয়টি সিদ্ধান্তের পর্যায়ে আছে। আগামী ২৮ এপ্রিল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আমাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে হবে। শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সেটা করা হবে। যেভাবে আস্তে আস্তে বন্ধ হয়েছে, সেভাবে আস্তে আস্তে সব খুলবে। ২৮ এপ্রিলের পরে আর কঠোর লকডাউন নয়, চলাচলে বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। জীবনযাত্রার বিষয়ে দিকনির্দেশনার দিয়ে একটা প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সেখানে বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে। তবে নিশ্চিত করা হবে-‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’।

শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, মাস্ক পরেই আমাদের চলতে হবে। কেউ যেন মাস্ক ছাড়া না বের হয়। সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সবাই যেন মাস্ক পরে। ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’-এ বিষয়টি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

এদিকে চলমান লকডাউন শেষ হলে ২৯ এপ্রিল থেকে গণপরিবহণ চালু করার দাবি জানিয়েছেন পরিবহণ মালিকরা। তারা বলছেন, রাজধানীসহ দূরপাল্লার পথেও বাস চালু করতে চান তারা। এ ক্ষেত্রে সীমিত আকারে অর্থাৎ অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চালানো যেতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়েও তারা তৎপর থাকবেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছেন। ২৮ এপ্রিলের আগে গণপরিবহণ চালুর কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। তবে ২৯ এপ্রিল থেকে গণপরিবহণ যাতে চালু করা যায়, সে বিষয়ে তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার জনসমাগম এড়াতে প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে এ নিষেধাজ্ঞা আরও দুই দিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তবে সে সময় সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, গণপরিবহণ চালু ছিল বলে এই লকডাউন ছিল অনেকটাই অকার্যকর। এরপর ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আটদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। লকডাউনের মধ্যে দোকান-শপিংমল বন্ধ রাখাসহ ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। সেই মেয়াদ শেষ হয় গত বুধবার (২১ এপ্রিল) মধ্যরাতে। তবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয়নি। তাই লকডাউনের মেয়াদ আগামী ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

এ সময় সব ধরনের অফিস ও পরিবহণ বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তবে উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকে লেনদেন করা যাচ্ছে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সতর্কতার অংশ হিসাবে সীমিত জনবল দিয়ে বিভিন্ন শাখা চালু রেখেছে ব্যাংকগুলো।

এর মধ্যে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দোকান ও শপিংমল খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। তারা এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাদের দাবি তুলে ধরেন। পরে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, সোমবার নাগাদ দোকান ও শপিংমল খুলে দেওয়া হতে পারে। তবে শেষ দফায় লকডাউন ঘোষণার আগে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনায় ও ঈদ সামনে রেখে তা শিথিল করার ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে দোকানপাট খোলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপরই এলো দোকানপাট খুলে দেওয়ার ঘোষণা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :