atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > সারাদেশ > স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, নিজ রাইফেলের গুলিতে পুলিশ সদস্যের আত্মহত্যা

স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, নিজ রাইফেলের গুলিতে পুলিশ সদস্যের আত্মহত্যা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ

পঞ্চগড়ে মধ্যরাতে দায়িত্বরত অবস্থায় মাথায় গুলি করে ফিরোজ আহমেদ (২৫) নামে এক পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে আর দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথেই বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ওই পুলিশ সদস্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে জানায় পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে পঞ্চগড় জেলা শহরের সোনালী ব্যাংকের ভেতরে এই ঘটনা ঘটে। ফিরোজ আহমেদের বাড়ি দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার পলি মির্জাপুর আবতাবগঞ্জ এলাকায়। তিনি ওই এলাকার আবু সাঈদের ছেলে।

পুলিশ ও ফিরোজের স্বজনরা জানায়, প্রথম স্ত্রী হনুফা মিশু ও তার ৬ মাসের ছেলে ফারদিন থাকার পরও মোবাইলে পরিচয়ের পর ফিরোজ প্রেমে জড়িয়ে পড়েন পার্শ্ববর্তী বিরামপুর উপজেলার এইচএসসি পরীক্ষার্থী সোবহানী তাবাস্সুম উপমার (১৭) সাথে। প্রায় তিন মাস আগে তারা বিয়ের কাজও সম্পন্ন করেন। দিনাজপুরে কোচিংয়ের কথা বলে গত এক মাস আগে ফিরোজের সাথে পঞ্চগড়ে এসে জেলা শহরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন তারা।

গত কয়েক দিন ধরে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল। এমনকি উপমা তাকে ডিভোর্স দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার তাদের মধ্যে আবারও ঝগড়া হয়। রাত ১২টায় উপমাকে বাড়িতে তালাবদ্ধ করে রেখে জেলা শহরের সোনালী ব্যাংকে ডিউটিতে যান ফিরোজ।
এর মধ্যেই তাদের মধ্যে মোবাইলে বাগবিতণ্ডা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে উপমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে ফিরোজ তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসে আবারও ডিউটিতে যান। 

রাত ১টায় উপমার আবারও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তিনি সোনালী ব্যাংকের সামনে গিয়ে আবারও তার স্বামীর সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। ফিরোজ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে ডিউটিতে ফিরে আসেন।

তবে মোবাইলে ঝগড়া চলতে থাকে। এক পর্যায়ে ফিরোজ তার চায়না রাইফেল দিয়ে মাথায় গুলি করে। গুলির শব্দ পেয়ে অন্য সহকর্মীরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিটি তার থুতনির নিচ থেকে মাথার উপর দিয়ে বেড়িয়ে গেছে। পরে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে পুলিশ লাইন্সে ওই পুলিশ সদস্যের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তার পরিবারসহ মরদেহ পুলিশ পাহাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয় ফিরোজের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে। সেখানে জানাজা শেষে দাফন কার্য সম্পন্ন হবে। 

ফিরোজের সহকর্মী হাসান আলী বলেন, ‘দুদিন ধরে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল। তার দ্বিতীয় স্ত্রী ব্যাংকের সামনে এসেও তার সাথে ঝগড়া করে। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হয়। তবে তাদের মধ্যে মোবাইলে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছিল। আমরা নিজ নিজ কক্ষে ছিলাম। ও ছিল গার্ড রুমে। রাত ২টায় তার ডিউটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। তার কয়েক মিনিট আগে হঠাৎ আমরা গুলির শব্দ শুনতে পাই। গিয়ে দেখি ফিরোজ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে আমরা পুলিশের গাড়িতে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

ফিরোজের দ্বিতীয় স্ত্রী উপমা বলেন, ‘আমি এখন কিছুই বলতে পারব না।’

উপমার মা ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘আমরা জানি উপমা দিনাজপুরে কোচিং করছে। সামনে তার পরীক্ষা। কিন্তু সে যে বিয়ে করে পঞ্চগড়ে আছে আমরা কেউ জানতাম না। ফিরোজের আগের স্ত্রী ও পরিবারও জানত না। এই ঘটনার পর এখন সব কিছু জানলাম। আমার মেয়ের শ্বাসকষ্ট হলেও ফিরোজ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করছিল না। এজন্য তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে বলে শুনেছি।’

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মির্জা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই পুলিশ সদস্যকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার থুতনির নিচে ও মাথার উপরে গর্তসহ মারাত্মক জখম হয়েছে।’

পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন, ‘দাম্পত্য কলহের জেরে ওই পুলিশ সদস্য নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছে। ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ প্রথম জানাজা হওয়ার পর তার গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :