অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
পুলিশ জনগণের বন্ধু এসব নাটকীয় কথাবার্তা অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখনকার পুলিশ রন্ধ্রে রন্ধ্রে করে দুর্নীতি। মামলার ভয় দেখিয়ে দুই যুবকের কাছ থেকে উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে নওগাঁর রানীনগর থানার শ্রেষ্ঠ উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর রানীনগর থানায় এসআই হিসেবে যোগদান করেন সাজ্জাদ হোসেন। চলতি বছর আগস্ট মাসে অভিন্ন মানদণ্ডে রাজশাহী বিভাগে শ্রেষ্ঠ এসআই হিসেবে পুরস্কৃত হন তিনি।
সম্প্রতি রানীনগর উপজেলার সর্বরামপুর গ্রামের লিটন উদ্দিন সরদারের ছেলে টুটুল হোসেন একই উপজেলার রাতোয়াল গ্রামের এক কিশোরীকে নিয়ে বিয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকায় পালিয়ে যান। বিষয়টি জানাজানি হলে মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য ও প্রযুক্তির সহযোগিতায় মেয়েটির অবস্থান নিশ্চিত হন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাজ্জাদ হোসেন। এরপর সেখান থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে বিয়ের সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। মেয়েটিকে সুস্থ অবস্থায় বুঝে পাওয়ার পর থানায় করা অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেন তার অভিভাবকরা। এরপরও অপহরণ মামলার ভয় দেখিয়ে সাক্ষীর কাছে থেকে ২০ হাজার টাকা এবং টুটুলের কাছে থেকে ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ আদায় করেন এসআই সাজ্জাদ।
টুটুল হোসেন বলেন, ভালোবেসে ওই কিশোরী আমার সঙ্গে স্বেচ্ছায় পালিয়ে ছিল। এরপর আমরা বিয়ে করি। ওই মুহূর্তে কিশোরীর মা আমার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। কিছুদিন পর থানা থেকে কল করা হলে ৫ আগস্ট রাতে আমার স্ত্রীকে থানায় পৌঁছে দিয়েছিলাম। থানা থেকে আমার স্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ তুলে নেন। কিন্তু এরপরও এসআই সাজ্জাদ হোসেন আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। টাকা না দিলে অপহরণ মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখান। পরে মামলা থেকে রেহাই পেতে দাবি করা টাকা তাকে দেওয়া হয়। আর বিয়ের সাক্ষীর কাছ থেকেও ২০ হাজার টাকা আদায় করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই সাজ্জাদ হোসেন বলেন, রাতোয়াল গ্রামের একটি মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে মর্মে তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ করে। আমি মেয়েটিকে উদ্ধার করি। সর্বরামপুর গ্রামের একটি ছেলে এ ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিল। পরে মেয়ের পরিবারের সদস্যরা মেয়েটিকে জিডিমূলে তাদের হেফাজতে নেন। এ বিষয়ে থানায় কোনো মামলা হয়নি। তবে এ ঘটনায় কারও কাছ থেকে উৎকোচ আদায় করা হয়নি।
রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ মিডিয়াকে বলেন, একটি মেয়ে এবং ছেলেকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। উদ্ধারের পর নাবালক মেয়েটিকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয় বলে জানান ওসি আবুল কালাম আজাদ। এরপরও অভিযোগ যেহেতু উঠেছে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।
উল্লেখিত বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর জন্য বড়ই ন্যক্কারজনক বলে মন্তব্য করেছেন, এটিভি সংবাদের সম্পাদক এস এম জামান। তিনি বলেন বিভাগীয় পর্যায়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এখানে ওসির সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও মন্তব্য সম্পাদকের। তা না হলে ওসি কি করে বলেন, টাকা নেওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয?