atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > অপরাধ-অনুসন্ধান > অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ!

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ!

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, এটিভি সংবাদ 

দেশের সর্বোচ্চ দুর্নীতি বর্তমানে শিক্ষাখাতে। প্রতিনিয়ত তা প্রমাণ করছে শিক্ষাখাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা মানুষগুলো। মানুষ গড়ার কারিগররা আজ জড়িয়ে পড়েছেন, জালিয়াতি ও দুর্নীতির সাথে।

আমাদের আজকের প্রতিবেদন জেলা ময়মনসিংহের গৌরীপুরে মোজাফফর আলী ফকির উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে নিয়োগে জালিয়াতি, দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে বুধবার এইচএসসির প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা গ্রহণকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব ও মামলা-মোকদ্দমার ফলে গভর্নিং কমিটির নির্বাচন প্রক্রিয়া অচল হয়ে পড়েছে। ‘সহকারী শিক্ষক’ পদে চাকরির আবেদন করে ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক’ পদে যোগদানের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। পরে খবর পেয়ে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার কমল রায় কলেজ ক্যাম্পাসে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক শাহ তাহমিনা ইয়াসমিন জানান, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে তাকে কোনো অবগত করা হয়নি। বাইরের কোচিংয়ের প্রশ্নে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরীক্ষা নিচ্ছেন। তিনিও শিক্ষার্থীদেরকে জানান, এ প্রশ্ন তিনি করেননি। তার প্রশ্ন ছাড়া যেনো পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ না করে।

উল্লেখিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। শিক্ষার্থীরা শ্রেণি শিক্ষকের পক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পক্ষ গ্রহণকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হন তারা। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বাদানুবাদে জড়িয়ে যান। অনেকেই পরীক্ষা হল থেকে বেড়িয়ে আসেন। এ কারণে পরীক্ষা প্রায় ৩০ মিনিট দেরিতে শুরু হয়।

অপরদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ময়মনসিংহের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উচ্চমাধ্যমিক) এস এম মোবাশ্বির হোসেন স্বাক্ষরিত ৩ মার্চের জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৮ জুন পরীক্ষার ফরম পূরণ, ১৪ জুলাই প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ও পরীক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান।

এ প্রসঙ্গে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াসমিন জানান, বাংলা বিভাগের প্রভাষককে তিনি মৌখিকভাবে এবং স্টাফদের দিয়ে ২৬ মে’র মধ্যে প্রশ্নপত্র জমা দিতে বলেছেন। প্রশ্নপত্র জমা না দেওয়ায় বিকল্প প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিতে বাধ্য হয়েছেন। আশপাশের সকল কলেজের এ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ও চলমান আছে। তাই তিনিও শুরু করেছেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ বলেন, বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে গত রোববার (২৯ মে) কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে নিয়োগে জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মোমিনুল হক, পৌরনীতি ও প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক নূর মোহাম্মদ সিদ্দিকী ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক শাহ তাহমিনা ইয়াসমিন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুল ইসলামের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে কলেজের চাকরিচ্যুত ও ৪ বছর যাবৎ অনুপস্থিত মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক আনোয়ার হোসেনকে (বর্তমানে ফুলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে কর্মরত) ও ৭ বছর কলেজে অনুপস্থিত (চাকরি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত) ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী জান্নাতুল ফেরদৌসকে ব্যানবেইজে কর্মরত দেখিয়েছেন। কলেজের অন্যান্য শিক্ষকদের দিয়ে প্রভাষক নুর মোহাম্মদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ নিয়ে এ শিক্ষককে বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন। সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পদবিহীন ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক’ পদে নিয়োগ জালিয়াতি করেছেন। উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগের শর্তানুযায়ী বিএডবিহীন ও ১২ বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়াই অবৈধভাবে এ পদে আসীন হন।

মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক আনোয়ার হোসেন বলেন, কীভাবে ব্যানবেইজে আমার নাম অনলাইন করা হয়েছে তা আমার জানা নেই! আমি ফুলপুরে কর্মরত আছি।

অপরদিকে সাবিনা ইয়াসমিন ২০০৫ সালের ৪ জানুয়ারি মোজাফফর আলী ফকির নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্বহস্তে ‘সহকারী শিক্ষক’ পদে সভাপতি বরাবরে আবেদন করেন। আবেদনের বিষয় অপশনে পরবর্তী ‘ক্রস’ চিহ্ন দিয়ে ‘প্রধান’ শব্দ যুক্ত করেন। তবে ‘অতএব’ অপশনে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য প্রার্থনা করেন। যে আবেদনে নিয়োগে পেয়েছেন, সে আবেদনে শিক্ষাগত যোগ্যতার অপশনে বিএড লিখা নেই। অভিজ্ঞতার অপশনেও নেই ১২ বছরের অভিজ্ঞতার কোনো কলাম।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ২০২১ সালের ১ আগস্ট ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছি। তবে পূর্বের কোনো রেকর্ডপত্র পাইনি। তাই আনোয়ার হোসেনের চাকরি সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমার জানা নেই।

নিম্ন মাধ্যমিক (প্রস্তাবিত উচ্চ বিদ্যালয়) বিদ্যালয়টিতে ২০০৫ সনের ২৯ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ করেছি। অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য কারণে আমার বেতন একধাপ নিচে দেওয়া হচ্ছে। ২০০৫ সালে বিএড করেছি, ফলাফল কবে হয়েছে জানা নেই। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অন্যান্য শিক্ষকরা ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন, সেটা তদন্ত করছি। সেকারণেই বেতন ভাতা বন্ধ রেখেছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :