atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > সারাদেশ > শতবর্ষী কদবানুর ভাগ্যে জুটেনি বয়স্ক বা বিধবা ভাতা!

শতবর্ষী কদবানুর ভাগ্যে জুটেনি বয়স্ক বা বিধবা ভাতা!

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ 

শতবর্ষী কদবানু, দুই পুত্র আর তিন কন্যার জননী। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে স্বামী হারান তিনি। দেশ স্বাধীন হয়, তবে পরাধীনতা থেকে এখনো মুক্তি মেলেনি কদবানুর।

কদবানু ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের পুম্বাইল গ্রামের মৃত মহর উদ্দিনের স্ত্রী। স্বামীর ভিটেমাটি নেই, নেই বাপ-দাদার সম্পদও। ধীরে ধীরে ছেলে-মেয়েও সরে যাচ্ছেন! শেষ বয়সে সন্তানের এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। আশ্রয় নিয়েছেন চতুর্থ মেয়ে ছোলেমা খাতুনের বাড়িতে।

বিত্তশালী আর ক্ষমতাবানদের ঘরে ঘরে বয়স্ক-বিধবা ভাতার কার্ড পৌঁছলেও শতবর্ষী এই মায়ের ঘরে আজও টোকা মারেনি। পাটখড়ির বেড়া আর টিন শেডের নিচে থাকেন শতবর্ষী এই নারী।

পিত্রালয় থেকে স্বামী গৃহে এসেছিলেন পণপ্রথা দিয়ে, ছিল সহায়-সম্পদও। ৭১ সালের যুদ্ধের সময় স্বামী মারা যাওয়ায় দুর্গাপুরে সব রেখে এসেছে বসতি স্থাপন করেন পুম্বাইলে। ঝড়-বৃষ্টিতে খুব আতঙ্কে থাকেন, এইতো উড়িয়ে নিবে কুঁড়েঘরটি।

জনপ্রতিনিধিদের দ্বারেদ্বারে বারবার ছুটে গেছেন একটি কার্ডের জন্য, হবে হবে বললেও হয়নি কদবানুর কার্ড। তার মেয়ে ছোলেমা খাতুনের প্রশ্ন, আর কতো বয়স হলে আমার মা বয়স্কভাতা পাবে?

ছোলেমা খাতুনের বয়স ৬২ বছর। তার স্বামী শাইনুদ্দিন। তার বাড়িও একই গ্রামে। বয়সের ভারে অনেকটা তিনিও নুয়ে পড়েছেন। কিডনিসহ নানা রোগে আক্রান্ত। ভিটেমাটি ছাড়া নেই কোনো সম্বল। তারপরেও সামর্থ্যানুযায়ী শাশুড়িকে দেখভাল করে যাচ্ছেন। ছোলেমা খাতুনের সংসারে রয়েছে ৫ ছেলে আর ১ মেয়ে।

শতবর্ষী কদবানু লাঠি ভর করে এখন ছুটছেন সাহায্যের জন্যে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি। শনিবার মেয়ের বাড়ি গিয়েও খোঁজ পাওয়া যায়নি কদবানুর। আর কদিন পরেই ঈদ, সে জন্য শুভানুধ্যায়ীদের দ্বারেদ্বারে এই বয়সেও ছুটছেন।

এক পা এগুলে, আরেক পা এগুতে কষ্ট হয়, কাঁপে হাত-পা। তারপরেও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখছেন তিনি। আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে প্রায় দুই ঘণ্টা পর দেখা মিলে কদবানুর।

কদবানুর বড় মেয়ে হালিমা খাতুন (৮০) ২ ছেলে আর ২ মেয়ের সংসারে থাকেন নেত্রকোনা জেলার সুসংদুর্গাপুরে। তিনিই থাকেন তার সন্তানদের নিকট। মায়ের খবর নেয়া বা দেখভাল করার কোনো সুযোগ নেই। এর পরের পুত্র ফজলুল হক। বয়স ৭৫ বছর। তিনি থাকেন ফুলপুর উপজেলার উল্ফাগফুয়া গ্রামে। ২ মেয়ের সংসারে তিনিও আছেন বড় কষ্টে।

অপর মেয়ে ছালেমা খাতুন (৬৮)। তার স্বামী নেই। ২ ছেলে আর ১ কন্যার সংসারে বাস করেন। ছোট ছেলে আজিজুল হক (৬২)। শারীরিকভাবে অসচ্ছল, রাস্তার ধারে শুটকি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সংসারে রয়েছে ৩ মেয়ে আর ১ ছেলে। মায়ের দেখভালের সামর্থ্য নেই। নিজের জীবন আর সন্তানদের সংসারে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে।

কদবানুর প্রতিবেশী মিরাজ আলীর পুত্র মো. হাবিবুর রহমান (৬০) জানান, কদবানুর বয়স একশত পেরিয়ে ৭-৮ বছর হবে। তবে জন্ম নিবন্ধনে কদবানুর জন্ম দেখানো হয়েছে ১৯২৭ সালের ২২ মার্চ।

বয়সের ভারে ন্যুব্জ কদবানু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর নিকট একটি শক্ত ঘরের আকুতি জানান। তিনি এখন কানেও কম শোনেন, হাঁটতেও পারেন না। ক্ষোভে দুঃখে কষ্টে বললেন, ‘কতো মানুষের মরণ হয়, আমার তো মরণও হয় না।’

শতবর্ষী এই বৃদ্ধার নামে সরকারের কোনো সাহায্য তালিকায় নাম নেই এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন, রামগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি। তিনি বলেন, আমার জানা ছিল না।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :