নিজস্ব প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি আসাদ চৌধুরী অসুস্থ হয়ে কানাডার একটি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) কানাডার লেকেরিজ হেলথ অশোয়া হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একমাত্র মেয়ে নিসরাত জাহান শাঁওলী।
কবির েমেয়ে জামাই ফেসবুকে লিখেছেন, মৃত্যু হায়নাদের মতো তার পিঁছু লেগেছিল অনেকদিন ধরেই কিন্তু তিনি ছিলেন সিংহরাজ। সহজে হার মানেননি, তার নামের অর্থও তাই। সবার টান টান উত্তেজনা আর শুভ প্রত্যাশার অগুনিত তারগুলো ছিঁড়ে গেছে। (ইংরেজিতে) হি লিভড এ গ্রেট লাইফ। প্লিজ প্রে ফর হিজ ডিপার্টেড সউল।
এর আগে গত বছর নভেম্বরে আসাদ চৌধুরীর ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। এছাড়াও শ্বাসকষ্ট, কিডনিসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত কবি দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে প্রায় হাসপাতাল থেকে হাসপাতালেই সংকটজনক অবস্থায় অবস্থান করছিলেন।
কবির স্ত্রী শাহানা চৌধুরী, মেয়ে নুসরাত জাহান চৌধুরী শাঁওলী, দুই ছেলে আসিফ চৌধুরী ও জারিফ চৌধুরীসহ নাতি-নাতনি নিয়ে কয়েক বছর ধরে কানাডার টরন্টোতে বসবাস করছিলেন।
কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বাকেরগঞ্জ জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য পড়াশোনা শেষ করে ১৯৬৪-১৯৭২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীকালে ঢাকায় থিতু হওয়ার পর একাধিক খবরের কাগজে সাংবাদিকতা করেছেন তিনি। ১৯৮৫-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ভয়েজ অব জার্মানির বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে দীর্ঘকাল চাকরির পর এর পরিচালক হিসেবে অবসর নেন তিনি।
১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন কবি আসাদ চৌধুরী। পাশাপাশি, আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু সম্মাননা, আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘তবক দেওয়া পান’ প্রকাশের পর বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে- বিত্ত নাই বেসাত নাই, প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড়, জলের মধ্যে লেখাজোখা, যে পারে পারুক, মধ্য মাঠ থেকে মেঘের জুলুম পাখির জুলুম, দুঃখীরা গল্প করে, নদীও বিবস্ত্র হয়, বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই, কিছু ফল আমি নিভিয়ে দিয়েছি, ঘরে ফেরা সোজা নয়, কবিতা-সমগ্র প্রভৃতি।
এছাড়াও শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে তাঁর অসংখ লেখনী। লেখালেখি ছড়াও আবৃত্তি এবং উপস্থাপনার জন্য অনেক জনপ্রিয় ছিলেন।
কবির মৃত্যুতে দেশে-বিদেশে সাহিত্যাঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিশেষ করে কানাডা প্রবাসী বাঙালিরা শোকের সাগরে নিমজ্জিত। তবে তাঁর দাফন কোথায় সম্পন্ন হবে তা জানা যায়নি।