ফরিদপুর প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ
কোনো শিক্ষার্থীর গায়ে হাত দিলে, সেই শিক্ষককে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। শনিবার বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থা নন্দিতা সুরক্ষা আয়োজিত কিশোরীদের যৌন হয়রানি পর্যালোচনা বিষয়ক ‘টাউন হল মিটিংয়ে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ফরিদপুর সদরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মাধবদিয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়, এএফ মজিবুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, ফরিদপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ফরিদপুর সিটি কলেজের ২০১ কিশোরী-তরুণীর মাঝে যৌন হয়রানির মাত্রা বিশ্লেষণের ওপর তিন মাসের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ফরিদপুরে ৪৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ কিশোরী নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়।
‘টাউন হল মিটিংয়ে’ বক্তারা বলেন, এক ইঞ্চি জমি রক্ষা করার জন্য আমরা লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে দেই, কিন্তু নিজের শরীর আক্রান্ত হলে আমরা চুপ থাকি। আমাদের এ মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী ৭৬ দশমিক ৯২ শতাংশ মৌখিক, ৪৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ শারীরিক, ৩৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ মেসেজে, ১৪ দশমিক ২ শতাংশ ফেসবুক কমেন্টে এবং ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হন। যাদের মাধ্যমে এ কিশোর-তরুণীরা নিপীড়নের শিকার হয়, তাদের মধ্যে ৭৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ অপরিচিত ব্যক্তি, ৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ পরিচিত ব্যক্তি, ১৯ দশমিক ৫২ শতাংশ আত্মীয়স্বজন, ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বন্ধু, ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিক্ষক এবং ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের শিকার হন।
নিপীড়নের স্থান হিসাবে ৩৮ শতাংশ ঘরের বাইরে বা ঘুরতে গিয়ে, ২৫ শতাংশ স্কুল কলেজ কোচিংয়ে, ১৬ শতাংশ বাড়িতে, ১১ শতাংশ আত্মীয়ের বাড়িতে, ৬ শতাংশ বিয়ে বাড়িতে এবং ৪ শতাংশ খেলার মাঠে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।
যৌন হয়রানির কথা পরিবারের সদস্যদের জানাতে গিয়ে ১৩ দশমিক ১ শতাংশ কিশোরী পালটা পরিবার দোষারোপের শিকার হয়, ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ কিশোরীকে তাদের পরিবার বিষয়টি গোপন রাখার পরামর্শ দেয়, ২৭ দশমিক ২১ শতাংশ কিশোরীকে মানসিক সহায়তা দেন পরিবারের সদস্যরা এবং ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ কিশোরীর পরিবার নিপীড়কদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।
ওই গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যৌন হয়রানির শিকার ১৬৯ জনের মধ্যে ১০ জন পরিবার, স্কুল, কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি ও থানায় জানিয়েছেন। অন্যরা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম। এতে সভাপতিত্ব করেন নন্দিকা সুরক্ষার সভাপতি তাহিয়াতুল জান্নাত রেমি। গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন নন্দিতা সুরক্ষার স্বেচ্ছাসেবক জুবায়ের আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক সুপ্তি সাহা।
আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক রেজভী জামান, জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাসউদা হোসেন, সাংবাদিক পান্না বালা, ব্লাস্ট ফরিদপুরের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী, মহিলা পরিষদের জেসমিন কবির, নারী নেত্রী আসমা আক্তার মুক্তা, স্কুল শিক্ষক অপূর্ব রায় প্রমুখ।