atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > রাজধানী > থানায় পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু!

থানায় পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু!

নিজস্ব প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ 

২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ গাড়ি চালক আলমগীর হোসেনকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, ঐ দিন রাতে থানায় রেখে রাতভর মারপিট করা হয়। থানা থেকে মুক্তি পেতে তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়। পরে তার কাছ থেকে ৮০ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ঐ মামলায় পুলিশ তাকে আদালতে পাঠায়। আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর সময় তিনি পড়ে যান। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। পরে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আলমগীর অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৯ ডিসেম্বর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিত্সকরা মৃত ঘোষণা করেন।

মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আলমগীর হোসেনকে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে। ১৬ ডিসেম্বর রাতে পুলিশ তাকে উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে আটকের পর ৫ লাখ টাকা দাবি করে। এই টাকা দিতে অস্বীকার করলে রাতেই থানার ভেতর তাকে পেটানো হয়। পরদিন পুলিশ তাকে ৮০ পিস ইয়াবা দিয়ে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে দেয়। পরিবারের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে মৃতের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, পিঠের উভয় পার্শ্বে লালচে দাগ রয়েছে। কোমরের নিচে উভয় দিকে সাড়ে ৫ ইঞ্চি লম্বা কালো দাগ রয়েছে। বাম পায়ের হাঁটুর নিচে কালো ফোস্কা দেখা গেছে। বাম হাতের কনুইয়ের ওপর লালচে দাগ রয়েছে।

পরবর্তীতে মৃতের স্ত্রী আলেয়া বেগম স্বামীকে হত্যার অভিযোগ এনে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করতে যান। পুলিশ অভিযোগটি গ্রহণ করেননি। পরে আলেয়া বেগম ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি ঢাকার আদালতে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা, এসআই মো. মিজানুর রহমান, এএসআই নামজুল ও মো. সোহাগকে আসামি করে একটি মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তা তদন্তের জন্য উত্তরা পশ্চিম থানায় পাঠায়। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে স্থানান্তর করা হয়।

গত বছরের ৪ অক্টোবর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ থেকে নিহতের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিত্সক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ রিপোর্টে উল্লেখ করেন, তার হার্টের বাম চেম্বার আগে থেকেই বড় ছিল। এটার কারণে তার স্বাভাবিকভাবে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে।

ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে, আলমগীর হোসেনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বাদী চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি ঢাকার আদালতে এই মামলা নিয়ে নারাজি পিটিশন করেন। আদালত নারাজি গ্রহণ করে মামলাটি সিআইডির কাছে পুন:তদন্তের জন্য পাঠায়। আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে সিআইডিকে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয় আদালত।

এ ব্যাপারে মৃত আলমগীর হোসেনের স্ত্রী ও মামলার বাদী আলেয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমার স্বামী ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে কখনো-ই জড়িত ছিল না। মামলাটি আদালতে বাদী পক্ষকে আইন সহায়তা দিচ্ছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্র। এই মামলায় আইনজীবী প্যানেলে আছেন নীনা গোস্বামী, মিজানুর রহমান, আব্দুর রশিদ ও দীলিপ পাল।

এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের প্রস্তুতকৃত সুরতহাল রিপোর্টে মৃতের শরীরের একাধিক চিহ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মৃতের শরীরের বিভিন্নস্থানের তোলা ছবিতেও সেটা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এরপরও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। লাশের ছবি ও অন্যান্য সাক্ষীই এখন এই মামলার প্রধান তদন্ত বিষয়। এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদের কোনো বক্তব্য মিলেনি।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :