atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > প্রচ্ছদ > দুর্বৃত্তরা যেন পার না পায়

দুর্বৃত্তরা যেন পার না পায়

ধর্মীয় পরিচয়জনিত কারণে হিন্দু নির্যাতন—অনেকটা বলির পাঁঠার মতো। ভোটের আগে। ভোটের পরে। ভোট দিলে। ভোট না দিলে। শুধুই নির্মম নির্যাতনের শিকার। পরিচয় ওরা হিন্দু।

‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি ছিলাম ছয়-সাত বছরের শিশু। আমার মা নির্যাতন-অত্যাচার-বাড়িঘর পোড়ার পর হতবিহ্বল হয়ে আমার ছোট ভাইটিকে নিয়ে বসেছিলেন আর কাঁদছিলেন। সেরকম একটি ছবি ছাপা হয়েছে গত ৭ জানুয়ারি পত্রিকার (যশোরের অভয়নগর থানার চাঁপাতলার মালোপাড়ার কোনো এক মা কোলে শিশুসন্তানসহ হতবিহ্বল) প্রথম পৃষ্ঠায়। মা স্বাধীনতার পর প্রায়ই বলতেন, ‘আবার যুদ্ধের মতো কিছু একটা হবে না তো!’ প্রগতিশীল ধ্যানধারণার মানুষ বাবা বলতেন, ‘এখন স্বাধীন হয়েছি, সেদিন তো নেই।’ বাবা জীবিত থাকতেই ২০০১-এর নির্বাচন উত্তর সহিংসতায় বাড়িঘর ভাংচুর হলে (রামসিদ্ধি, গৌরনদী, বরিশাল) মা বলেছিলেন, ‘এখনো চলবে?’ তখন বাবা বলেছিলেন, ‘সাময়িক।’ ইতোমধ্যে বাবা না ফেরার দেশে। কর্মসূত্রে আমি বাড়ি থেকে একটু দূরে। টেলিভিশন দেখে দেখে ফোনে মা প্রশ্ন করে চলছেন, ‘তাহলে কি, এখনো চলবে, কিছু করার নেই?’

এবারের সহিংসতার বড় শিকার সাতক্ষীরা, যশোর, দিনাজপুর, নাটোর, নীলফামারী, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, নেত্রকোণা, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, গাইবান্ধা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বাগেরহাট, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা এলাকার হিন্দু পরিচয়ধারী মানুষজন।

সামপ্রদায়িকতার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে একটি আদর্শিক ভিত্তি আছে। সে কোনো কোনো বিষয়ে চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফলে জীবনহানি অনিবার্য। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এখানে তেমন কোনো আদর্শিক ভিত্তি কাজ করে না। এখানে শুধুই যেন তেন ভাবে সম্পদ লুটেপুটে নেওয়ার প্রবল নিকৃষ্ট আকাঙ্ক্ষা। এই ধারার প্রবল প্রয়োগের কারণ আমাদের দেশের তথাকথিত প্রভাবশালীদের সম্পদ অর্জন স্পৃহার ধারাবাহিকতা। সে কারণেই বাংলাদেশে সামপ্রদায়িক নির্যাতনের কোনো বিচার হয় না।

স্বাধীনতার পর থেকেই সংখ্যালঘু নির্যাতন হলে এক পক্ষ অন্য পক্ষের ওপর দোষ চাপিয়ে দুর্বৃত্তদের পার পাওয়ার ব্যবস্থা করে। এই সামপ্রদায়িক নির্যাতনের নাটের গুরুরা সামপ্রদায়িক মনোবৃত্তির হলেও মাঠ পর্যায়ের দুর্বৃত্তরা কিন্তু মনোগতভাবে সামপ্রদায়িক নয়—এরা মূলত লোভী ও ভোগী। সে কারণেই এই শ্রেণির লোক আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির মধ্যে আছে। এরা ব্যক্তিজীবনে খুবই নিম্নস্তরের ধর্মীয় প্রাণী। মুখে যা-ই বলুক না কেন ব্যবহারিক জীবনে এদের ধর্মীয় অনুশাসনের কোনো প্রয়োগ নেই।

এরকম সমস্যা নিয়ে পারিবারিক পর্যায়ে আলোচনা করলে, অনেকেই আমাকে পলায়নের সুপারিশ করে। কিন্তু পলায়নের মধ্যে যে মুক্তি নেই সেই কথাটিও বিচার প্রতিষ্ঠার আগেই বুঝিয়ে দিতে হবে। আর অন্ধ সমর্থন ও আনুগত্য প্রকাশও ঝুঁকির কারণ। সেজন্য আমার আত্মবিশ্লেষণ হলো রাজনৈতিক শত্রু মিত্র চিহ্নিত সাপেক্ষেই গ্রহণ-বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে অথবা উত্সর্গীকৃত শিক্ষিতজনের সাহায্য নেওয়া উচিত।

পরিশেষে, এরকম মানবতাবিরোধী অপকর্মের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার ও সরকার প্রধানকেই নিজেদের ও বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে যথাযথ ভূমিকা নিতে হবে, নইলে পরবর্তী সময়ে তাদেরও টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

বরিশাল

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :