বান্দরবান প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ
বান্দরবান জেলার আলীকদমের ত্রিদেশীয় সীমান্ত। কিছু অসাধু চক্রের যোগসাজশে ওই সীমান্ত এলাকা দীর্ঘদিন ধরে চোরাকারবারিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চোরাকারবারি চক্র এখন সক্রিয়।
চোরাকারবারিরা আন্তর্জাতিক সীমান্ত ব্যবহার করে থাইল্যান্ড থেকে মীয়ানমার হয়ে পাহাড়ি পথে বাংলাদেশে গরু নিয়ে আসে। আলীকদম হয়ে দেশে ঢুকানোর পর এরা গরুগুলোকে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন টিলায় লুকিয়ে রাখে। পরে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় স্থানীয় হাটে তুলে হাসিল দিয়ে এগুলোকে বৈধ করে। এরপর নাইক্ষ্যংছড়ি-গর্জনিয়া-কক্সবাজার হয়ে চট্টগ্রামে এগুলো নির্বিঘ্নে পাঠিয়ে দেয়। এজন্য তারা প্রতিনিয়ত কৌশল পরিবর্তন করে।
সূত্র জানিয়েছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে আলীকদম-নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ি সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারিরা কয়েক হাজার গরু প্রবেশ করিয়েছে। দেশে ঢুকানোর পর এসব গরু পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে মজুত করছে তারা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও সাংবাদিক পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি মোটা অঙ্কের মাসোহারা নিয়ে এই চক্রের হয়ে কাজ করছে। যদিও গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে এই চক্রের কাছ অবৈধভাবে আনা বেশকিছু গরু জব্দও করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত ১৪ই জুন ব্যাটালিয়ন ৫৭ বিজিবি অভিযান চালিয়ে আলীকদম মিরিন চর পয়েন্টের জঙ্গল থেকে ১৭টি বিদেশি গরু আটক করে। এর আগে গত ২৪ মে বিজিবি আরও ৪০টি গরু আটক করেছিল। পরে শুল্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেগুলো নিলামে বিক্রি করা হয়। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ২৫টি বিদেশি গরু আটক করে নিলামে বিক্রি করে দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, আলীকদম অনেকদিন ধরেই চোরাকারবারিদের স্বর্গরাজ্য। সামনে কোরবানির মৌসুম। এখন এই পথ ধরে অবাধে গরু ঢুকছে। অবৈধ গরুর বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না, সবাই ম্যানেজ হয়ে যায়। প্রতিদিন শতশত গরু ঢুকছে। প্রশাসন এসব না দেখার ভান করে। ফলে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি স্থানীয় গরুর খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে, গত ৬ই জুন আলীকদম গরু বাজারে সরজমিন সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে হামলার শিকার হয়েছেন জিটিভির বান্দরবান প্রতিনিধি ফরিদ উদ্দিন।
শুল্ক ফাঁকি দিয়ে থাইল্যান্ড-এর ব্রাহামা জাতের গরু অবৈধ আমদানি ও ইত্যাদি বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহকালে চোরাকারবারিরা সাংবাদিক ফরিদকে মারধর করে। আলীকদম উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শফি আলমের নেতৃত্বে এই হামলা হয় বলে দাবি করেন সাংবাদিক ফরিদ উদ্দিন। চোরাকারবারিরা এ সময় ফরিদের মোবাইল ফোনও ভেঙে ফেলে।
এ বিষয়ে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুবা ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আলীকদম রুট দিয়ে চোরাই পথে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার হতে গরু পাচার করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যে কয়েকটি চালান জন্দ করেছে।
কোনো অবস্থায় অবৈধ চোরাই পথে আসা গরু পাচারের সুযোগ দেয়া হবে না। নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে। ১১ বিজিবির জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মো. নাহিদ হোসাইন বলেন, আলীকদম সীমান্তে স্মাগলারদের কর্মকাণ্ড রুখতে বিজিবি সবসময় তৎপর। এরমধ্যে কয়েক দফা অবৈধভাবে আনা বেশকিছু গরু জন্দ করেছি আমারা। সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি অস্ত্র, ইয়াবা, সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রম ও চোরাই পথে আনা গরুসহ সবধরনের পণ্য আটকে সীমান্তে বিজিবি’র তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।