প্রশাসনের কাছে বিচারের দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের
অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
সমাজে বেড়ে গেছে প্রতারকদের দৌরাত্ব। এ সমাজে প্রতারণার শিকার হচ্ছে বিভিন্ন জনে ভিন্ন ভিন্নভাবে। এটিভি সংবাদের অনুসন্ধানে আজ আমরা তুলে ধরবো গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের প্রতারকের হাদিউজ্জামানের চিত্র।
হাদিউজ্জামান শেখ বর্ষণ (২২), পিতা- বেলায়েত হোসেন মিলন, মাতা- নাজনীন নাহার, গ্রাম- নণীক্ষীর, উপজেলা- মুকসুদপুর, জেলা- গোপালগঞ্জ। বর্ষণের পরিচয় হয় একই উপজেলার ‘নিথিলা বৈরাগী’ (২০) নামের এক কলেজ পড়ুয়া খ্রিস্টান মেয়ের সাথে। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্ব থেকে জন্ম নেয় এক লোমহর্ষক ঘটনার।
হাদিউজ্জামান শেখ বর্ষণ কাজ করতো একটি বায়িং হাউজে। গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের মুক্তারটেক নামক এলাকায় বসবাস করতো সে। দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব আস্তে আস্তে গভীর হতে শুরু করে। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী নিথিলা বৈরাগী মনেপ্রাণে মুসলিম হওয়ার আশা পোষণ করে, আর সেই সুযোগে হাদিউজ্জামান বর্ষণ নিথিলাকে মুসলমান করে ঘরে তুলে নিবে বলে আশ্বস্ত করে।
এক পর্যায়ে নিথিলা বৈরাগী ভালোবাসার মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে চলে যায় গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানা এলাকার মুক্তারটেক নামক জায়গায় প্রেমিক হাদিউজ্জামান শেখ বর্ষণের ভাড়া বাসায়। নিথিলা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে এবং বিয়ে করে স্বামীর সাথে ঘর সংসার করবে এই আশায় এসেছিল সে। বিয়ের প্রলোভন দিয়ে বিয়ে না করে স্বামী-স্ত্রীর মতো সংসার করেছিল তারা। প্রায় আড়াই মাস সংসার করে তারা, যা ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ ও ইসলাম পরিপন্থী। তাদের এ অবৈধ মেলামেশার বিষয়টি একপর্যায়ে এলাকায় জানাজানি হলে মুক্তারটেক নামক এলাকার লোকজন তাদেরকে নিয়ে সালিশ বিচারে বসে। এক পর্যায়ে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মেয়ে ও ছেলের পরিবারকে বিষয়টি জানায় তারা। মেয়ের পরিবার এ বিয়েতে সম্মতি দিলেও ছেলের পরিবার কোন প্রকার সম্মতি দেয়নি।
উল্লেখিত ঘটনায় ছেলের পরিবার গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের উল্লেখিত মুক্তারটেক নামক এলাকায় আসে এবং উপস্থিত লোকজনের সামনে উভয় পরিবারের সম্মতি নিয়ে স্ট্যাম্প পেপারে লিখিত করে এবং তাদেরকে গ্রামে নিয়ে বিয়ে দিবে এই মর্মে উভয়কে নিয়ে গত ৬ এপ্রিল চলে আসে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলাধীন ছেলের বাড়ি ননীক্ষীর নামক গ্রামে। বিষয়টিতে গ্রামে হৈ-চৈ পড়ে যায়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সমন্বয় গত ৮ এপ্রিল একটি সালিশ বিচার হয়। মেয়ে পরিবার খ্রিস্টান তথা সংখ্যালঘু হওয়ায় সঠিক বিচার থেকে বঞ্চিত হয় নিথিলা ও তার পরিবার। ছেলে পক্ষের অভিভাবকেরা সাফ জানিয়ে দেয় এ বিয়ে হবার নয়। সালিশ বিচারে উপস্থিত বঙ্গরত্ন ডিগ্রী কলেজের প্রিন্সিপাল সমীর কুমার শাঁখারী, বানিয়ারচর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য সুমন মন্ডলসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে ছেলেপক্ষ সন্ত্রাসী কায়দায় বলে যা হবার হয়েছে, আমরা প্রয়োজনে মেয়েকে পড়াশোনার খরচ এমনকি ওর বিয়েতে যদি কোনো অর্থের প্রয়োজন হয় সেটাও দেখবো। বিষয়টি উপস্থিত লোকজনের সামনে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে লিখিত পড়িত হয়। তবে ঘটনায় নিশ্চুপ হয়ে যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা। বিচার চাপা পড়ে গেল, বুক ভরা কষ্ট নিয়ে ফিরে এলো নিথিলা ও তার পরিবারের সদস্যরা।
পরবর্তী দিন ৯ এপ্রিল, ২০২২ ভুক্তভোগী নিথিলা ও তার মা বিচার পাবার আশায় যান মুকসুদপুর থানায়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উপস্থিত না থাকায় তারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ওসি (তদন্ত) আমিনুর রহমানের সাথে। শুরু হলো ওসি (তদন্ত) আমিনুর রহমানের নাটক। গাজীপুরের ঘটনা এখানে কেন? গাজীপুরে যান ওখানে মামলা করেন ইত্যাদি ইত্যাদি। ভীত সন্ত্রস্ত নিথিলা ও তার মা। মায়ের আকুতি আমার মেয়ে নিথিলা বুঝি পেলোনা বিচার! এটিভি সংবাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিতে গেলে জানা যায়, স্থানীয় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই রেখেছে প্রতারক হাদিউজ্জামান শেখ বর্ষণ ও তার পরিবারের সদস্যরা। এ কারণেই নানা অজুহাত দেখিয়ে ওসি (তদন্ত) আমিনুর রহমান ভুক্তভোগীর অভিযোগ গ্রহণ না করে বিদায় দেয়।
৮ এপ্রিল উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে এলাকায় যে সালিশ বিচার হয়েছিল, যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় নিথিলা ও তার পরিবারের সদস্যদের হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছিল, নিথিলাকে প্রতারক হাদিউজ্জামান শেখ বর্ষণ ও তার পরিবারের সদস্যরা মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিল, সে বিষয়টি কি থানায় অভিযোগ আকারে গ্রহণ করতে পারতেন না? আইনের লোক হয়ে বে-আইনি কাজ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা কি হতে পারে?
জেলা প্রশাসনের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা, একটি মানুষ যখন যে এলাকায় বিপদে পড়বেন সেক্ষেত্রে ওই এলাকার স্থানীয় প্রশাসনের কি কোনো দায়িত্ব থাকে না? নিরীহ জনসাধারণকে ভুলের মধ্যে রেখে প্রশাসনের এ ধরনের নাটকীয় কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছেন, এটিভি সংবাদের সম্পাদক এস এম জামান।
উল্লেখিত বিষয়টি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের নজরে আসবে এবং স্থানীয় প্রশাসনকে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিবেন এমনটি আশা করছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন।