atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > অপরাধ-অনুসন্ধান > প্রশাসনের নাকের ডগায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে ‘লাইন খরচের’ নামে চাঁদাবাজি!

প্রশাসনের নাকের ডগায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে ‘লাইন খরচের’ নামে চাঁদাবাজি!

সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ  

প্রশাসনের নাকের ডগায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে ‘লাইনম্যান খরচের’ নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে অকটেনচালিত অটোরিকশা মালিক ও চালক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর, সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর (২) ও ক্যাশিয়ার সাইফুলের বিরুদ্ধে। আসছে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজ চক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গত দুই বছর ধরে চাঁদাবাজ চক্রটি সক্রিয় থাকলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

ভুক্তভোগী একাধিক অটোরিকশা চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে আসা যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে গুপ্তছড়া ঘাটের দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান জেটির পার্কিং ইয়ার্ড থেকে বের হওয়ার সময় প্রতিটি অটোরিকশা চালককে প্রতিবার দিতে হয় ২০ টাকা চাঁদা। সন্দ্বীপের প্রধান এ ঘাট দিয়ে স্টিমার, স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকায় প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। ঈদে যাত্রীসংখ্যা বেড়ে হয় দ্বিগুণের বেশি। এসব যাত্রী পরিবহনে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ অটোরিকশা ঘাটে আসা-যাওয়া করে। লাইনম্যান খরচের নামে চাঁদা থেকে চাঁদাবাজ চক্রের মাসিক আয় প্রায় তিন লাখ টাকা।

ভুক্তভোগী অটোরিকশা চালক মো. সোহেল মিডিয়াকে বলেন, ‘চাঁদাবাজরা অনর্থক আমাদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে নেয়। দিনে পাঁচবার ঘাটে গাড়ি ঢোকালে পাঁচবারই টাকা নেয়। সভাপতি জাহাঙ্গীর থানার দালাল। সাধারণ ড্রাইভাররা অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে থানা পুলিশ দিয়ে হয়রানি করার ভয় দেখায়।’

লাইনম্যান খরচের নামে চাঁদা আদায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ আসা যাত্রী কাজী আলাউদ্দীন বলেন, ‘যতবারই সন্দ্বীপ আসি, দেখি ড্রাইভারদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়। অন্যায়টা এখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আগামীতে চাঁদার পরিমাণ আরও বাড়বে। কারণ, দেখেও সবাই না দেখার ভান করে আছে। দিনশেষে চাঁদার টাকাটা ভাড়ার সঙ্গে যোগ করে দেয় ড্রাইভাররা, ওদেরও কিছু করার নেই।’

সরেজমিনে গুপ্তছড়া ঘাটে দেখা যায়, চট্টগ্রাম থেকে আসা যাত্রীদের অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে লাঠি হাতে ২০ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে জাহাঙ্গীর (২) ও সাইফুল। কিসের জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সিএনজি মালিক ও চালক সমিতির ক্যাশিয়ার সাইফুল বলেন, ‘অকটেনচালিত অটোরিকশা মালিক-চালক সমিতি ২০ টাকা করে নিতে বলেছে, এজন্য নিচ্ছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদাবাজির মূলহোতা অকটেনচালিত অটোরিকশা মালিক ও চালক সমিতির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর (২) বলেন, ‘সারাবছর আমরা গাড়ি প্রতি ১০ টাকা করো নেই। ঈদ উপলক্ষে ২০ টাকা করে নিচ্ছি। এ বিষয়ে বিআইডব্লিওটিএ আমাদের ডেকেছিল। যে কোনো গাড়ি ব্রিজে ঢুকলে টাকা নিতে পারব এই মর্মে দুই লাখ টাকা চেয়েছিল, আমরা রাজি হইনি। সাবেক ইউএনও সম্রাট খীসা এটার মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন, এটা এভাবে আছে-এভাবে চলবে। আমরা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের অনুমতি নিয়েছি।’

গুপ্তছড়া ঘাটে চাঁদাবাজির বিষয়টি স্বীকার করে অকটেনচালিত অটোরিকশা মালিক ও চালক সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মোটর লাইনে লাইনম্যান সারা বাংলাদেশের সব জায়গায় আছে। সে হিসেবে আমরাও লাইনম্যান নিয়োগ দিয়েছি। সাইফুল ও জাহাঙ্গীর ওদের বেতন হিসেবে চাঁদার টাকাটা দৈনিক ভাগ করে নেয়। আমি কোনো ভাগ নেই না। ’

চাঁদাবাজির দায় ঘাট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন এড়াতে পারে না উল্লেখ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা সন্দ্বীপবাসী’র সমন্বয়কারী খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘ঘাটের শৃঙ্খলা রক্ষা করা ঘাট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। কারণ তারা ভাড়া নেয়। যারা চাঁদা আদায় করছে তাদের কোনো বৈধতা নেই। আইনসম্মত কোনো ভিত্তি নেই। যাত্রী ও চালকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় কোনোভাবেই কাম্য নয়। ’

সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল  প্রশাসন ও সাধারণ যাত্রীদের অনুপস্থিতিতে একতরফা অকটেনচালিত অটোরিকশার অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ, সিরিয়াল পদ্ধতি ও লাইনম্যান নিয়োগ দেয় ঘাট কর্তৃপক্ষ ও অকটেনচালিত অটোরিকশা মলিক ও চালক সমিতি। যাত্রীদের প্রতিবাদের মুখে সিরিয়াল পদ্ধতি বন্ধ ও ভাড়া কমিয়ে উপজেলা প্রশাসন নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও বন্ধ হয়নি লাইনম্যান খরচের নামে চাঁদাবাজি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই, আমি খোঁজ-খবর নিচ্ছি। যদি অপরাধ করে থাকে ব্যবস্থা নেব।’

চট্টগ্রামের কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটের সন্দ্বীপ অংশে দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান জেটি ও জেটির পার্কিং ইয়ার্ড বিআইডব্লিওটিএর অধীনে। জেটির পার্কিং ইয়ার্ড অকটেনচালিত অটোরিকশা মালিক ও চালক সমিতিকে ইজারা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষ বন্দর ও পরিবহন বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নয়ন শীল। তিনি বলেন, ‘এরকম কেউ যদি চাঁদাবাজি করে, ওদের পুলিশে ধরিয়ে দেন।’

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :