atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > অপরাধ-অনুসন্ধান > ফরিদপুরে স্টেডিয়ামের নামে তোলা বালু গোপনে বিক্রি

ফরিদপুরে স্টেডিয়ামের নামে তোলা বালু গোপনে বিক্রি

অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ 

ফরিদপুরের পদ্মা নদী থেকে রাতে খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে বলগেটে (ছোট নৌযান) করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে স্তূপ করে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায় ছয় মাস ধরে এভাবে বালু বিক্রির কারবার চালিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্র। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এই বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধ। আগামী বর্ষা মৌসুমে ওই বাঁধ ভেঙে পাশের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এলাকাবাসী।

শহর রক্ষা বাঁধের সীমানা ঘেঁষে গোয়ালন্দ-তারাইল সড়কের পূর্ব পাশে ভাজনডাঙ্গা এলাকায় প্রায় দুই একর জমিজুড়ে প্রায় ১৫ ফুট উঁচু করে রাখা হয়েছে বালুর স্তূপ। সেখান থেকে ভেকু মেশিন (এস্কেভেটর) দিয়ে ট্রাকে লোড করা হচ্ছে সেই বালু। কাজটি করছে মামা-ভাগ্নে এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। নদী থেকে বালু উঠিয়ে বলগেটে ভরে এখানে এনে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। পরে এখান থেকে সেই বালু প্রতি ঘনফুট সাড়ে ৩ থেকে ৪ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

মামা-ভাগ্নে এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এমদাদুল হক মিডিয়াকে বলেন, পদ্মা নদীর নাব্যতা রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে ২ টাকা ৪৫ পয়সা দরে আমরা বালু কিনি। এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ মিলে আমরা প্রতি ঘনফুট বালু সাড়ে ৩ টাকা থেকে ৪ টাকা দরে বিক্রি করছি। এ বছর আমরা ২ লাখ ৫৬ হাজার ঘনফুট বালু ক্রয় করেছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য সাইনবোর্ড এলাকা থেকে সাগর, হেলাল ও তুহিন বালু তোলে। বালু কিনে তারা প্রতি ঘনফুট ৫০ পয়সা বেশি দামে বিক্রি করে। তারা জানান, একটি বলগেটে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ঘনফুট বালু ধরে। প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার ঘনফুট বালু বিক্রি করা হয়। মামা-ভাগ্নে চাতালের একশ গজ আগেই রয়েছে হিরুর চাতাল। সেখানকার এক যুবক জানান, বাৎসরিক চুক্তিতে তাদের দুই একর জমি বালু ব্যবসায়ী হিরুর কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে।

সাদীপুর বাজার পার হয়ে কাদেরের বাজার সংলগ্ন মজিবর বিশ্বাসের বালুর চাতালের ব্যবসায়িক অংশীদার রফিকুল ইসলাম বলেন, চাতালের মালিকের সঙ্গে তিনিসহ ২০ জনের অংশীদারিত্ব রয়েছে। তিনি নিজে শুধু আর্থিক হিসাবটা দেখেন। চাতালের মালিক আলিয়াবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা। তিনিই সব নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি বলেন, ফরিদপুরে একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম হবে বায়তুল আমান এলাকায়। তার জন্য আলিয়াবাদের চর গজারিয়া সাইনবোর্ড এলাকায় পদ্মা নদী থেকে ড্রেজিং করে বালু তোলা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ঘনফুট বালু তুলে রাখা হয়েছে। সেই বালু থেকে বিক্রি করা হচ্ছে। যদিও এখনো স্টেডিয়ামের বালু ফেলার কোনো ওয়ার্ক অর্ডার হয়নি।

এই চাতাল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সাইনবোর্ড এলাকায় প্রায় ১০ একর জায়গাজুড়ে পাহাড়ের মতো উঁচু করে রাখা হয়েছে বালুর স্তূপ। এখানে ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য রাখা হয়েছে বালু। এই জায়গা থেকে ১২ ফুট পাইপ দিয়ে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে পদ্মা নদীতে বসানো দু’টি ড্রেজার মেশিনের সঙ্গে। শ্রমিকরা জানান, এই ড্রেজার মেশিনের মালিক চরভদ্রাসন উপজেলার দিপু খান নামে এক ব্যক্তি।

পদ্মা নদী থেকে বালু তোলার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সাদীসহ সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন সম্রাট, শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ও মজিবর বিশ্বাস। তাদের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত রয়েছে। তবে বালুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন দাবি করে শেখ সাদী বলেন, আমার একটি জমি বালু রাখার জন্য ইজারা দিয়েছিলাম তার মেয়াদ শেষ হয়েছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী বলেন, জনস্বার্থে বালু তোলা হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা জানতে পেরেছি, শেখ কামালের নামে একটি স্টেডিয়াম হবে। তবে সেখানে এখনো কোনো বালু ফেলা হয়নি। যারা বালু উত্তেলনের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেককে নোটিশ করা হবে। তারা দোষী হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :