নিজস্ব প্রতিবেদক: মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক রাহাত খান। এর আগে তার মরদেহ নেওয়া হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে। সেখানে শ্রদ্ধা জানান দীর্ঘদিনের সহকর্মী এবং সহযোদ্ধারা।
রাহাত খানের বিদায়ে শোকাহত দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধারা। গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে তার মরদেহ আনার পর সেখানে একে একে জড়ো হতে থাকেন পরিবারের সদস্য, সাংবাদিক ও সাহিত্য অঙ্গনের গুণীজন। স্মৃতি চারণে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্ত্রী অপর্ণা খান।
মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখা গুণী এই মানুষের মৃত্যু সাংবাদিক ও সাহিত্য জগতের অপূরণীয় ক্ষতি বলে মনে করেন তার সহকর্মীরা। তারা বলেন, সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখক হিসেবে তিনি ছিলেন খ্যাতিমান। তার অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে এদেশের মানুষ। জানাজার পর প্রয়াত সাংবাদিকের কফিনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের যুগ্ম সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ফুল দেন। এসময়ে কেন্দ্রীয় নেতা অসীম কুমার উকিল, বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন। পরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, জাতীয় প্রেস ক্লাব কর্মচারী ইউনিয়ন, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দেয়া হয় রাহাত খানের কফিনে।
প্রেসক্লাবে জানাজা শেষে রাহাত খানের মরদেহ নেওয়া হয় তার শেষ কর্মস্থল তেজগাঁয়ের “প্রতিদিনের সংবাদ’ কার্যালয়ে। সেখানে দ্বিতীয় নামাজে জানাজার পর, শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার শেষ ঠিকানা হয় মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থান।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর ইস্কাটনে নিজ বাসায় মারা যান তিনি। গত ২০ জুলাই রাহাত খানকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগের দিন বাসায় বিছানা থেকে নামতে গিয়ে কোমরে ব্যথা পান তিনি। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে এক্সে করা হলে তার পাঁজরে গভীর ক্ষত ধরা পড়ে। এর পাশাপাশি তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে তাকে বারডেম হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়বেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। এ কারণে তার চিকিৎসার প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়ায় সার্জারি করা যাচ্ছিল না বলে বাসাতেই অবস্থান করছিলেন তিনি।
কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার জাওয়ার গ্রামের কৃতী সন্তান রাহাত খানের জন্ম ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর। দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে।
এছাড়াও তিনি একুশে পদক; বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ লেখক আর সাংবাদিকতার জন্য পেয়েছেন অনেক সম্মাননা। দিলুর গল্প, অনিশ্চিত লোকালয়, অমল ধবল চাকরি, ছায়া দম্পতি, মন্ত্রীসভার পতন রাহাত খানের উল্লেখযোগ্য বই।