পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, জেলা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি মন্তব্য সচেতন মহলের!
সৈকত মনি, এটিভি সংবাদ
রাজবাড়ী জেলার অধিকাংশ ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব চলছে। ভাটার ভেতরেই করাতকল বসিয়ে অনেকেই চালাচ্ছেন এই কার্যক্রম। এ ছাড়া ফসলি জমি, লোকালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা গড়ে ওঠায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন আশপাশের বাসিন্দারা। এ ছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার অধিকাংশ ইটভাটাই অবৈধ। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় ৮৭টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪টিই অবৈধ।
রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ ও কালুখালী উপজেলার বেশ কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফসলি জমি, লোকালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে অনেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ভাটায় ইট তৈরিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার চারপাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে কাঠ। ট্রাক, ইঞ্জিনচালিত করিমন, ভ্যান ও ঘোড়ার গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থান থেকে কাঠ সংগ্রহ করে ভাটাগুলোতে আনা হচ্ছে। কোনো কোনো ইটভাটায় কাঠ প্রস্তুতের জন্য বসানো হয়েছে করাতকল।
অপর দিকে ভাটাসংলগ্ন বাড়ির বাসিন্দারা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালুর কারণে তাঁদের বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঘরের চালা ও বেড়ায় জমে আছে ধুলার আস্তরণ। ঘরের ভেতরের আসবাবগুলোরও একই অবস্থা।
সদর উপজেলার খানখানাপুর গ্রামের বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাটায় মেশিনের শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়, ধুলায় গা ভরে যায়। গায়ের মধ্যে চিকমিক করে। ভাটার মালিকদের কিছু বলার সাহস নেই আমাদের।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাগমারা গ্রামে গড়ে ওঠা এসবিএস ব্রিকসের মালিক বদরুল সরদার বলেন, কীভাবে কাঠ পোড়াচ্ছি সেটা আপনাদের বলতে বাধ্য নই। ভাটায় কীভাবে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করছি সেটা ডিসি অফিসে গিয়ে জেনে আসেন, এ বিষয়ে তারা সব জানে।
গোয়ালন্দ উপজেলার ডিএসবি ব্রিকসের মালিক মো. খাইরুল হাসান বলেন, সরকার আমাদের যে নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা সেই নির্দেশনা মেনেই ভাটা পরিচালনা করছি। এক-দেড় বছর আগে যে কয়লার দাম ছিল আট হাজার টাকা, সেই কয়লা এখন ২৮-৩০ হাজার টাকা টন। এ কারণে ভাটা পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, এ বছর ইট পোড়ানোর মৌসুম শুরুর আগে জেলার ইটভাটা-মালিকদের একটি সভায় আমন্ত্রণ জানাই। সেখানে ইটভাটা প্রস্তুতের নীতিমালা তাঁদের শোনাই। জ্বালানি কাঠ না পোড়ানোর বিষয়ে নির্দেশনা দিই। এরপরও আমাদের কাছে অভিযোগ এলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।