atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > জাতীয় > পাবনায় নাগরিক সংবর্ধনায় নতুন রাষ্ট্রপতি

পাবনায় নাগরিক সংবর্ধনায় নতুন রাষ্ট্রপতি

পাবনা প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ 

সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। মঙ্গলবার (১৬ মে) পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে দেওয়া গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

বিকালে উৎসবমুখর পরিবেশে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তাকে পাবনাবাসী বরণ করে নেয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে সাহাবুদ্দিন পাবনাবাসীকে গর্বিত করেছেন। তার হাত ধরে পাবনা এগিয়ে যাবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে রাষ্ট্রপতির হাতে ফুল, ক্রেস্ট ও পাবনার প্রতীকী চাবি তুলে দেওয়া হয়।

নাগরিক সংবর্ধনায় দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, গণতন্ত্রের অস্তিত্বের প্রয়োজনে আগামী নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে সবকিছু বিচার করতে হবে। জনগণের উচিত হবে-বিবেক দ্বারা বিচার করে প্রতিনিধি নির্বাচন করা।

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তন করতে হলে নির্বাচনে আসতে হবে। কোনো সমস্যা থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। দেশের উন্নয়নে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কার্যকর অবদান রাখতে হবে। গত ১৪ বছরে অর্জিত দেশের তুলনামূলক উন্নয়ন বিশ্লেষণ করে এবং বিবেক-বিবেচনা করে আগামী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ভাষণের এক পর্যায়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা প্রাকৃতিক ঝড়ের ব্যাপারে সতর্ক করলে রাষ্ট্রপতি বলেন, ঝড় উঠুক না কেন- আমি তো এখানে ঝড় উঠাচ্ছি। পাবনায় রাষ্ট্রপতির চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিন নাগরিক সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সমাজসেবক ও রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ বাল্যবন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, হঠাৎ করে বঙ্গভবনে চলে যাইনি, রাজপথ থেকে বঙ্গভবনে গিয়েছি। পাবনার ইন্দিরা পট্টি থেকে, পাবনা টাউন হলের সভা থেকে বঙ্গভবনে গিয়েছি। পাবনার আব্দুল হামিদ রোড থেকে আন্দোলন শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বঙ্গভবনে গিয়েছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্পর্শ পেয়েছি। তিনি আমাকে নাম ধরে ডাকতেন। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য হয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জেল খেটেছি, আমার পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে। রাজনীতির প্রতিটি ধাপ পেরিয়েই বঙ্গভবনে গিয়েছি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, এ দেশের সংবিধান বহুবার ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। পাকিস্তানি ধারায় প্রবর্তন করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। পরে জনগণ তা রুখে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ১৪ বছর ধরে দেশে যে উন্নয়নের ধারা বইছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ধরে রাখতে হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের কথিত দুর্নীতির অভিযোগ খণ্ডনে তার ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক থাকাকালে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন।

সংবর্ধনায় আবেগাপু­ত হয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনারা যে ভালোবাসা দিলেন তা কখনো শোধ করতে পারব না। মানুষ যেভাবে কাজকর্ম ফেলে রাস্তায় নেমে আনন্দ প্রকাশ করছেন তা আমার সারাজীবন মনে থাকেবে। তিনি বলেন, আজ থেকে চার বছর আগে পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আমি এর সভাপতি ছিলাম। পাবনার উন্নয়নে ফাউন্ডেশন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে পাবনা-ঢাকা সরাসরি এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস চালু হবে।

নাগরিক সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি, নুরুজ্জামান বিশ্বাস এমপি, আহমেদ ফিরোজ কবীর এমপি, মকবুল হোসেন এমপি, সংরক্ষিত আসনের এমপি নাদিরা ইয়াসমিন জলি, পাবিপ্রবির উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. হাফিজা খাতুন, নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির আহবায়ক স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক ও মাছরাঙা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, সদস্য সচিব ও রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ বাল্যবন্ধু প্রফেসর শিবজিত নাগ, আব্দুল মতীন খান, ড. আব্দুল আলীম প্রমুখ।

এর আগে সকালে পাবনা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেন, কোনো সমাজ ব্যবস্থা ধার করে চলে না। মানুষের ইচ্ছার ভিত্তিতে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আমি সব সময় ত্যাগের রাজনীতি করেছি, কখনো ভোগের রাজনীতি করিনি। তিনি বলেন, অনেক মতবাদ দেখেছি। একমাত্র বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা কাজে লেগেছে। মুজিববাদের ওপর বিশ্বাস করে ও তার নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছি এবং দেশ স্বাধীন করেছি। পাবনা প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন স্বাধীনতা-উত্তরকালে দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। সে সময় তিনি পাবনা প্রেস ক্লাবের সদস্য হন। পরে তাকে আজীবন সদস্য করা হয়।

নিজের ছাত্র রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রপতি ওই সময়ের অনেক গুণী সাংবাদিক এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। নিজের সাংবাদিকতা জীবনের বিভিন্ন স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, অনেক গৌরবোজ্জ্বল দিন এ প্রেস ক্লাবে অতিবাহিত করেছি। বিভিন্ন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। ৭০ থেকে ৭৫ জনকে চাকরি দিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিদান নেইনি। আমি সব সময় ত্যাগের রাজনীতি করেছি, কখনো ভোগের রাজনীতি করিনি।

পাবনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পাবনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ শিবজিত নাগ, সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি এবং সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ প্রমুখ।

একইদিন সকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পাবনার বিসিক শিল্পনগরীতে ‘স্কয়ার লাইফ সায়েন্স লিমিটেড’-এর ফলক উন্মোচন করেন। সেখানে দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নেন।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের চার দিনের পাবনা সফরের দ্বিতীয় দিনে সকালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নগরী পরিদর্শন করেন। সেখানে পৌঁছলে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামুয়েল এস. চৌধুরী। তার সঙ্গে ছিলেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড ও স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :