atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > রাজধানী > মাছের রেকর্ড দাম, লাভ করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা

মাছের রেকর্ড দাম, লাভ করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা

সৈকত মনি, এটিভি সংবাদ

প্রায় এক মাস ধরে রাজধানীর বাজারগুলোতে রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে চাষের বিভিন্ন মাছ। বাড়তি দামের কারণে ভোক্তাদের অস্বস্তি চরমে। আমিষের চাহিদা কিভাবে মিটবে—কপালে এই চিন্তার ভাঁজ নিয়ে স্বল্প আয়ের মানুষকে বাজার থেকে মাছ না কিনেই ঘরে ফিরতে হচ্ছে। গরিবের মাছ হিসেবে পরিচিত পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়াও ২০০ টাকা কেজিতে মিলছে না।

মাছের খামারিরা বলছেন, মাছের খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন, বিদ্যুৎ খরচ এবং শ্রমিকদের বাড়তি মজুরির জন্য মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু খামারিরা যে হারে দাম বাড়িয়েছেন, সে তুলনায় উচ্চহারে দাম বাড়িয়ে মাছের বাজার অস্থির করেছেন মধ্যস্বত্বভোগারী।

মাছের বাজার অস্থির করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা

গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঝারি ও বড় সাইজের তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৭০ টাকা এবং পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রুই মাছের দাম ওজনভেদে ভিন্ন। এক কেজি ওজনের রুই মাছের দাম ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, দুই-আড়াই কেজি ওজনের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, আর তিন কেজির বেশি ওজনের হলে দাম হাঁকা হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। মাঝারি ও বড় সাইজের কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো. রুবেল গতকাল বলেন, ‘কোরবানির ঈদের পর থেকেই আড়তে মাছের দাম চড়া। আমাদেরই এখন বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

মাছের রেকর্ড দাম, লাভ করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা

রাজধানীর ভাটারা থানার মমতাজ উদ্দিন কাঁচাবাজার থেকে রকিব হাসান নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী গতকাল শনিবার ৪৫০ টাকা কেজি দরে একটি রুই মাছ কেনেন এক হাজার ৪০০ টাকায়। তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে ২৩ বছর ধরে আছি, এত বেশি দামে মাছ কিনতে হয়নি কখনো। আমার মনে হচ্ছে মাছের বাজারেও সিন্ডিকেট কাজ করছে। বিষয়টি সরকারের দেখা উচিত।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিশ ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হামিদুল হক গতকাল বলেন, ‘মাছের খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খরচ, বিদ্যুৎ বিল ও মজুরি খরচ বৃদ্ধির কারণে মূলত মাছের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। মাছের খাদ্যের মান ভালো না হওয়ার কারণেও উৎপাদন খরচ বাড়ছে। তবে চাষি পর্যায়ে যে হারে দাম বেড়েছে, মধ্যস্বত্বভোগীরা তার চেয়ে উচ্চহারে দাম বাড়িয়ে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করছেন। মাছ চাষ করে একজন চাষি কেজিতে ১০ টাকা লাভ করতে পারছেন না, অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগীরা এক দিনের ব্যবধানেই কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা লাভ করছেন।’

তিনি বলেন, ‘এক কেজি ওজনের রুই মাছ তৈরি করতে সাধারণত প্রায় এক বছর লাগে। বর্তমানে চাষি পর্যায়ে এক কেজি ওজনের রুই মাছ কেজি ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে এটি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকার বেশিতে। আমরা সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা করতে পারছি না বলে এই অবস্থা। চাষিবান্ধব বাজার দরকার। তাহলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে।’

খামারিরা যা বলছেন

ময়মনসিংহের গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল উপজেলায় মাছের খামারের সংখ্যা শতাধিক। অনেকে বড় বড় বিল ঘেরাও করে মাছ চাষ করছেন। তাঁদের বক্তব্য, মাছের উৎপাদন ভালো হলেও খাদ্য, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও আনুষঙ্গিক ব্যয় মিটিয়ে বিক্রিতে আশানুরূপ দাম মিলছে না।

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মৎস্য চাষি জিল্লুর রহমান জিলু জানান, তাঁর মোট ১২টি পুকুর রয়েছে। তিনি পাঙ্গাশ ছাড়াও রুই, কাতল ও তেলাপিয়ার চাষ করে থাকেন। সপ্তাহ অন্তর মাছ ধরেন। পাইকাররা এসে পুকুর থেকেই মাছ কিনে নিয়ে যান। মাঝারি সাইজের প্রতি কেজি রুই ও কাতল ৩০০ থেকে ৩২০, তেলপিয়া ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা এবং পাঙ্গাশ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করেন। আর এই মাছই উপজেলা সদরের বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজিতেই ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকার মৎস্য চাষি মো. কামরুজ্জামান জানান, খামার পর্যায়ে দেড় কেজি ওজনের পাঙ্গাশ ১৩৫ থেকে ১৩৭ টাকা, দুই কেজি ওজনের পাঙ্গাশ ১৪০ থেকে ১৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আধা কেজি ওজনের তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে এবং এক কেজি ওজনের কাছাকাছি তেলাপিয়া ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের রুই ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়, দুই কেজি ওজনের রুই ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেড় কেজি ওজনের কাতল কেজিপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, তিন থেকে চার কেজি ওজনের কাতল কেজি প্রতি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইকারি পর্যায়ে প্রতিদিনই মাছের দাম ওঠা-নামা করে বলেও তিনি জানান।

সিরাজগঞ্জের চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলায় ধানের পরেই রেকর্ড পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয়। মাছের উৎপাদন লাভজনক হওয়ায় এই উপজেলায় আবাদি জমি কমে প্রতিবছরই পুকুরের সংখ্যা বাড়ছে। তার পরও মাছ চাষিদের অভিযোগ, তাঁরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যে লাভ করে থাকেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফা তার চেয়ে বেশি। গতকাল উপজেলার মহিষলুটি মাছের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাইকারিতে এক কেজি ওজনের রুই বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়, মাঝারি সাইজের কাতল প্রতি কেজি ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা ও তেলাপিয়া প্রতি কেজি (৩টা থেকে ৫টায় এক কেজি) ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

তাড়াশ পৌর এলাকার মাছ চাষি অমল সরকার বলেন, প্রতি বিঘায় মাছ চাষ করতে খরচ হয় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। বাজার ওঠা-নামা করলে লাভের তারতম্য হয়। অনেক সময় লোকসানও হয়। আরেক মাছ চাষি মোক্তার হোসেন বলেন, সারা বছর মাছ উৎপাদন করে ধানের চেয়ে কিছুটা বেশি লাভ হলেও পাইকাররা লাভ করেন আরো বেশি।

এখনো ক্রেতার নাগালের বাইরে ইলিশ

এদিকে ভরা মৌসুমেও বাজারে কমছে না ইলিশের দাম। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা কেজি দরে, ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। কারওয়ান বাজারের ইলিশ বিক্রেতা মো. হৃদয় বলেন, ‘ইলিশের মৌসুম চললেও নদী ও সাগরে ইলিশ কম পাচ্ছেন জেলেরা। তাই বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম, দামও বাড়তি। বাজারে ইলিশের সরবরাহ না বাড়লে এবার দাম কমার সম্ভাবনা নেই।’

এটিভি/এস

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :