শ্রীপুর থেকে আব্দুর রহিম, এটিভি সংবাদ
জেলা গাজীপুরের শ্রীপুরে বরমী ইউনিয়নের ভিটিপাড়া গ্রামে মেয়ের হাতে নির্মমভাবে খুন হলো মা। এতোই মর্মান্তিক যার বর্ণনা দিতে গা শিহরিয়ে উঠে। মাকে মাটিতে শুইয়ে বুকের ওপর বসে দুই হাতে মাথা ও গলা টান দিয়ে ধরে মেয়ে আর সহকর্মী সোহেল ছুরি দিয়ে জবাই করে তাকে। মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায় তারা।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে মাকে হত্যার দায় স্বীকার করে মেয়ে শেফালী। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে শেফালী তার সহকর্মীর সহযোগিতায় লাখ টাকার চুক্তিতে মাকে হত্যার এ লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।
শুক্রবার সকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক আমজাদ শেখ এ তথ্য জানান।
পুলিশ জানায়, মিনারা বেগমের অন্য কোনো ওয়ারিশ না থাকায় আট বছর আগে একমাত্র মেয়ে শেফালীকে জমি উইল করে দেন। এ জমির জন্যই মেয়ের হাতে নির্মমভাবে খুন হতে হলো মাকে।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহমেদের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে শেফালী ও সোহেল রানা। এ সময় কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন ও শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক আমজাদ শেখ জানান, শেফালী তার সংসারে টাকার দরকার হলে বিষয়টি মা মিনারা বেগমকে জানায়। বাবার কাছ থেকে পাওয়া প্রায় ৯ শতাংশ জমি ও দুটি গরু বিক্রি করে টাকা দেওয়ার জন্য মিনারা বেগমকে চাপ দেয় শেফালী। এতে মিনারা বেগম রাজি না হওয়ায় শেফালীর সঙ্গে মিনারার ঝগড়া হয়। মিনারা রাগ করে চড়-থাপ্পড় মেরে শেফালীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
এতে সে ক্ষুব্ধ হয়ে মাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। মাকে হত্যার জন্য তার সহকর্মী সোহেল রানাকে বিষয়টি জানায়। মিনারাকে হত্যা করতে ১ লাখ টাকা দাবি করে সোহেল। শেফালী রাজি হয়ে সোহেলকে ১৫ হাজার টাকা অগ্রিম দেয় এবং বাকি ৮৫ হাজার টাকা কাজ শেষে দেবে জানিয়ে তারা মিনারা বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১০ ফেব্রুয়ারি মাহফিলে ওয়াজ শোনার কথা বলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মা ও মেয়েসহ তিনজন একটি অটোরিকশা ভাড়া করে উপজেলার বরমীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
পথে সোহেল একটি সেভেন আপে (কোমলপানীয়) চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে মিনারাকে খেতে দেয়। মুহূর্তে মিনারা অচেতন হয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বরমীর ভিটিপাড়া গ্রামের সাধুখার টেক এলাকার গভীর জঙ্গলের ভেতর নিয়ে শেফালী তার মাকে মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে বুকের ওপর বসে দুই হাতে মাথা ও গলা টান দিয়ে ধরে আর সহকর্মী সোহেল ছুরি দিয়ে জবাই করে। দু’জনে মিলে হত্যা নিশ্চিত করে লাশ পুকুরে ফেলে ফিরে আসে।
জেলার শ্রীপুরে বরমী ইউনিয়নের ভিটিপাড়া গ্রামে গভীর জঙ্গল থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাত নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে একমাত্র মেয়ে শেফালী ও তার সহকর্মীর সোহেল রানাকে গ্রেফতার করে শ্রীপুর থানা পুলিশ। মা মিনারা বেগম (৫৭) শ্রীপুর পৌরসভার ভাংনাহাটি গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী। মাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার একমাত্র মেয়ে শেফালী (৩৫) শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্ব খণ্ড (পুকুরপাড়) গ্রামের ফরিদের স্ত্রী। সহকর্মী সোহেল রানা (২৫) শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী থানার খড়িয়াকাজিরচর গ্রামের মেরাজ উদ্দিনের ছেলে। শ্রীপুরের বিজিবেড গার্মেন্টসে শেফালী ও সোহেল চাকরি করত।
এ ঘটনায় ওইদিন থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করে। মামলাটি তদন্ত করে শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক আমজাদ শেখ। পাশাপাশি র্যাব, সিআইডি, পিবিআইর এর বিশেষজ্ঞ দল অজ্ঞাতনামা লাশ শনাক্তকরণে ব্যর্থ হয়। ক্লুবিহীন মামলা তদন্ত করতে পুলিশ বিভিন্ন আঙ্গিকে তদন্ত শুরু করে।
২ মার্চ বুধবার পুলিশ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে সকাল ১১টায় ফরিদ ও বিকাল ৪টায় শেফালীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
শেফালীর দেওয়া তথ্যমতে, ৩ মার্চ ভোরে শেফালীর সহযোগী সোহেল রানাকে ভাংনাহাটি এলাকা থেকে আটক করে ঘটনাস্থলের পাশের একটি পুকুর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত একটি চাকু উদ্ধার করা হয়।
কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন বলেন, সামান্য বিষয় নিয়ে মেয়ে তার মাকে হত্যা করতে পারে এমন ধারণাই ছিল না পুলিশের। অবশেষে পুলিশ একটি ক্লুলেস হত্যার ঘটনা সফলভাবে উদ্ঘাটন করেছে।