অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
জেলা চাঁদপুর সদরের ১০ নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম খান এক সময় যিনি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। চুরির দায়ে তাকে কলাগাছের সাথে বেঁধে রেখেছিল এলাকার জনসাধারণ। তাকে এলাকার লোক এখনো চোরা সেলিম বলেই জানে। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে সেলিম খান অবৈধভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হন। প্রভাব খাটিয়ে নদী থেকে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রিত বেড়িবাঁধ খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, কাবিখা ও কাবিটার অর্থ তছরুপের অভিযোগ রয়েছে এ দুর্নীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে।
হাজারো অভিযোগে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান বিষয়গুলো নিয়ে কর্ণপাত না করে চালিয়ে যাচ্ছেন গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে তার অপকর্ম। জাতীয় পর্যায়ের প্রথম শ্রেণীর পত্রিকায় প্রমাণাদিসহ বিস্তর লিখেও কোন কিছুই করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কোন অদৃশ্য শক্তির বলে এতো অপকর্ম করেও কি করে পার পেয়ে যাচ্ছেন সামান্য একজন ইউপি চেয়ারম্যান? অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির আস্থাভাজন এই চোরা সেলিম খান। ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান শিক্ষামন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট বলেই এতো অপকর্ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন।
এতো কিছু করেও ক্ষ্যান্ত হননি ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান। সীমাহীন অপকর্মের হোতা দুর্নীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যানের দুর্নীতিতে চাঁদপুরের বাতাস ভারী হয়ে গেছে। পুরো জেলা শহরটাকে গ্রাস করার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন এই দুর্নীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যান।
জেলা শহরের বড় স্টেশন থেকে মেঘনা নদী পেরিয়ে পদ্মার পেটে, রাজরাজেশ্বর এলাকার ডুবোচর। প্রায় আট বছর ধরে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার ডুবোচর থেকে আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে বালু তুলছেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান। প্রায় দুই শতাধিক ড্রেজার দিয়ে ২৪ ঘণ্টা ধরে এ কাজ করে চলেছেন তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীর লোকেরা।
পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, এভাবে বালু তোলার কারণে চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধের কয়েকটি স্থান ডেবে গেছে, ভেঙে পড়ছে নদীর তীরও। ব্যাপকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়েছে জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজনন।
চাঁদপুর জেলার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জনস্বার্থে নৌপথ সচল করার কথা বলে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বালু তুলছেন সেলিম খান।
বর্তমানে ছোট ও বড় প্রতিটি ড্রেজার দিয়ে দিনে ২০ থেকে ৪০ হাজার ঘনফুট বালু ও মাটি তোলা হচ্ছে। প্রতিটি ড্রেজারে ২০ হাজার ঘনফুট তোলা হলে ২০০ ড্রেজারে দিনে বালু উঠছে ৪০ লাখ ঘনফুট। মাসে তোলা হচ্ছে ১২ কোটি আর বছরে ১৪৪ কোটি ঘনফুট বালু।
ড্রেজার ও বালুর ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, পদ্মা ও মেঘনা নদী থেকে তোলা বালু বর্তমানে প্রতি ঘনফুট বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিন টাকা। আড়াই টাকা হিসাবে দুই নদী থেকে দিনে এক কোটি টাকার বালু বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে মাসে বালু বিক্রি হচ্ছে ৩০ কোটি টাকার। বছরে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৬০ কোটিতে। ২০১৫ সাল থেকে এই টাকার একটি কানাকড়িও সরকারের ঘরে যাচ্ছে না। গত আট বছরে কমবেশি ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা সেলিম খানের পকেটে ঢুকেছে।